রোজার গুরুত্বপুর্ন কিছু বিষয়






১। রোজা অবস্থায় চোখ, নাক ও কানের ড্রপ, স্প্রে ব্যবহার করা যাবে। নাকের স্প্রে/ড্রপও ব্যবহার করা যাবে, তবে এক্ষেত্রে শর্ত হল এটি যাতে গলার ভেতর বা পেটে না চলে যায়। চলে গেলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। তবে শুধু মুখের ভেতর আসলে তা গিলে না ফেলে, কুলি করে বাহিরে ফেললে রোজা নষ্ট হবে না।


২। চিকিৎসার প্রয়োজনে রোজা রেখে অক্সিজেন, নেবুলাইজেশন, ইনহেলার কিংবা চেতনানাশক গ্যাস গ্রহনে রোজা নষ্ট হবে না। (নেবুলাইজেশনন সম্পর্কে হাম্বলী ও হানাফী মাযহাবে মত পার্থক্য রয়েছে)

৩। হার্টের এনজাইনার সমস্যার জন্য হঠাৎ বুকব্যথা উঠলে ব্যবহৃত নাইট্রোগ্লিসারিন ট্যাবলেট বা স্প্রে জিহ্বার নিচে ব্যবহার করলে রোজা নষ্ট হবে না। তবে খেয়াল রাখতে হবে ওষুধ গিলে ফেলা যেন না হয়।

৪। হার্ট কিংবা অন্য কোনো অঙ্গের এনজিওগ্রাফি করার জন্য কোনো রোগ নির্ণায়ক দ্রবণ শরীরে প্রবেশ করানো হলে তাতেও রোজার কোনো ক্ষতি হবে না। একই ভাবে কোনো অঙ্গের অভ্যন্তরীণ চিত্র ধারণের জন্য সেই অঙ্গের প্রবেশ পথে কোনো ক্যাথেটার বা নালির মাধ্যমে প্রয়োজনীয় তরল রঞ্জক প্রবেশ করালে রোজা নষ্ট হবে না।

৫। রোগ নির্ণয়ে এন্ডোস্কোপি বা গ্যাস্ট্রোস্কোপি বা ইউরেথ্রস্কোপ করলেও রোজা নষ্ট হয় না। তবে এন্ডোস্কোপি বা গ্যাস্ট্রোস্কোপি করার সময় ভিতরে তরল কিংবা অন্য কোনো কিছু প্রবেশ করানো যাবে না, যার খাদ্য গুণ রয়েছে।

৬। রোজা রাখা অবস্থায় লিভারসহ অন্য যেকোনো অঙ্গের বায়োপসি করা যাবে।

৭। রোজা রাখা অবস্থায় পেরিটোনিয়াল কিংবা মেশিনে কিডনি ডায়ালাইসিস (Dialysis) করা যাবে।
৮। শিরা পথে খাদ্য উপাদান ছাড়া কোনো ওষুধ ত্বক, মাংসপেশি, হাড়ের জোড়ায় ইনজেকশন হিসেবে প্রয়োগ করলে রোজার কোনো ক্ষতি হবে না। তবে রোজা রাখা অবস্থায় স্যালাইন বা গ্লুকোজ বা শক্তিবর্ধক জাতীয় কোনো তরল শিরাপথে গ্রহণ করা যাবে না।

৯। চিকিৎসার প্রয়োজনে যা চর্ম দ্বারা শরীরে শোষিত হয় এমন সকল ঔষধ, যেমন- ক্রিম, অয়েন্টমেন্ট, ব্যান্ডেজ, মেডিকেটেড প্লাস্টার ইত্যাদি ব্যবহার করলে রোজার কোনো সমস্যা হবে না।

১০। রোজা রেখে জরুরি ভিত্তিতে দাঁত তোলা যাবে এবং দাঁতের ফিলিং করা যাবে এবং ড্রিল ব্যবহার করা যাবে। এক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে রক্ত, পানি বা মেডিসিন যাতে গিলে ফেলা না হয়।

১১। পেস্ট দিয়ে ব্রাশ করলে কিংবা মাউথওয়াশ (গার্গল/স্প্রে) ব্যবহার করলে রোজা ভাঙবে না, তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন গিলে ফেলা না হয়। সবচেয়ে উত্তম হল এগুলো ব্যবহার না করে মেসওয়াক ব্যবহার করা।

১২। রোজা রেখে রক্ত পরীক্ষার জন্য রক্ত দিলে এবং কাউকে রক্তদানেও কোনো বাধা নেই। সুস্থ সবল ব্যক্তির রক্ত দান করলে রোজা ভঙ্গ হয়না। কিন্তু গ্রহণ করলে রোজা ভাঙবে। রক্তদানের পর রক্তদাতা দুর্বল অনুভব করলে রোজা ভেঙ্গে ফেলতে পারেন। এই জন্য কাফফারা দিতে হবে না, পরে শুধু একটি রোজা কাজা করলেই হবে।

১৩। চিকিৎসার জন্য পায়খানার রাস্তায় কিংবা যোনি পথে সাপোজিটরি, ট্যাবলেট ব্যবহারে রোজার কোনো ক্ষতি হয় না। পায়খানার রাস্তায় (Enema) দিলে বা প্রসাবের রাস্তায় ক্যাথেটার করলে রোযা নষ্ট হয় না।

১৪। পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য যোনি পথ কিংবা পায়ুপথে চিকিৎসক বা ধাত্রী আঙ্গুল প্রবেশ করালেও (যেমন- PV, DRE) রোজা নষ্ট হবে না। এছাড়া রোজা রেখে জরায়ু পরীক্ষার জন্য হিস্টোরোস্কোপি এবং আইইউসিডি প্রতিস্থাপন ও ব্যবহার করা যাবে।

১৫। জেনারেল অ্যানেসথেসিয়া ও সার্জারির জন্য রোজা ভঙ্গ হয়। মেজর সার্জারির জন্য রোজা না রেখে রমজান শেষে যেকোনো সময় এটি কাজা আদায় করে নিতে হবে। এই জন্য তাকে কাফফারা (একটানা ৬০টি রোজা) দিতে হবে না।

১৬। অনিচ্ছাকৃত ভাবে বমি করলে রোজা ভঙ্গ হবে না। তবে ইচ্ছা করে বমি করলে রোজা ভেঙ্গে যাবে।

১৭। অনিচ্ছাকৃতভাবে যেমন- আহত হয়ে কিংবা নাক দিয়ে রক্ত পড়লে রোজা নষ্ট হবে না।

১৮। গর্ভবর্তী এবং বাচ্চাকে দুধ খাওয়ায় এমন মা রোজার কারণে তার নিজের বা সন্তানের ক্ষতির আশঙ্কা যদি করে, দুর্বলতাবোধক করলে বা দুধ কম হয়, তার জন্য রোজা রাখার বাধ্যবাধকতা নেই। তবে যে রোজা গুলো বাদ যাবে, পরবর্তীতে যখন তার জন্য সহজ হবে এবং বাচ্চার ক্ষতির আশঙ্কা থাকবে না, তখন বাদ যাওয়া রোজাগুলো শুধু কাজা আদায় করে নিলেই হবে। এর জন্য কাফফারা দিতে হবে না।

১৯। মেয়েদের পিরিয়ডের রক্ত বের না হওয়া পর্যন্ত রোজা ভঙ্গ হবে না। পিরিয়ড শুরুর পর রোজা রাখা এবং নামাজ পড়া যাবে না। যে রোজা গুলো বাদ যাবে, রমজান শেষে সেগুলো কাজা আদায় করতে হবে। তবে নামাজের কাজা আদায় করতে হবে না।

Leave a Comment