রজঃচক্র কী? রজঃচক্রের বিভিন্ন পর্যায়গুলো বর্ণনা কর।



মেয়েদের বয়োঃসন্ধিকাল থেকে রজঃনিবৃত্তিকাল পর্যন্ত নির্দিষ্ট সময় (২৮ দিন) পর পর চক্রাকারে জরায়ু বা ইউটেরাস ( ল্যাটিন) থেকে রক্ত, মিউকাস, এন্ডোমেট্রিয়ামের (endometrium; গ্রিক endo = within, metra = uterus) ভগ্নাংশ ও অনিষিক্ত দ্বিধাণুর নিষ্কাশন বা নিঃসরণকে রজঃচক্রে বা মাসিক যৌন চক্র (menstrual cycle; ল্যাটিন mensis = month or menstruare = (discharge) বলে। মেয়েদের রজঃচক্রকে চারটি পর্যায়ে ভাগ করা হয়। যথা।

১. বৃদ্ধি বা বিস্তার পর্যায় বা প্রোলিফারেটিভ পর্যায় বা দশা (Follicular or proliferative phase): রজঃচত্রের দ্বিতীয় দিনে পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে ফলিকল উদ্দীপক হরমোন (Follicle stimulating Hormone-FSH) উৎপন্ন হয়। এ হরমোনের প্রভাবে ডিম্বাশয়ে ফলিকলের বৃদ্ধির সূত্রপাত হয়। ষষ্ঠ দিনে ফলিকলগুলোর একটি বৃদ্ধি পেয়ে গ্রাফিয়ান ফলিকলে পরিণত হয় এবং বাকিগুলো ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। গ্রাফিয়ান ফলিকলে ডিম্বাণু বৃদ্ধির পাশাপাশি ফলিকল থেকে ইস্ট্রোজেন হরমোন (estrogen hormone); গ্রিক oistros = mad desire, gennao = produce) তৈরি হয়। ইস্ট্রোজেন হরমোনের প্রভাবে জরায়ুর এন্ডোমেট্রিয়াম স্তরের দ্রুত বিস্তার ঘটে। ফলে জরায়ুর আন্তঃপ্রাচীর ডিম্বাণুর অবস্থানের জন্য উপযোগী হয়।

 ২. ডিম্বক্ষরণ বা ডিম্বপাত বা ওভ্যুলেশন পর্যায় বা দশা (Ovulation phase): ১২-১৩শ দিনে রক্তে ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা সর্বোচ্চ পর্যায়েপৌঁছায়। ফলে পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে লিউটিনাইজিং হরমোন নিঃসৃত হয়। এ হরমোনের প্রভাবে চতুর্দশ (১৪শ) দিনে গ্রাফিয়ান ফলিকল থেকে ডিম্বাণুমুক্ত হয়ে ডিম্বনালির মাধ্যমে জরায়ুর দিকে অগ্রসর হয়। গ্রাফিয়ান ফলিকল থেকে ডিম্বাণুর নিঃসরণকে ডিম্বক্ষরণ বা ডিম্বপাত বা ওভ্যুলেশন বলে।


৩. ক্ষরণ পর্যায় বা সিক্রেটারি পর্যায় বা দশা (Secretory or luteak phase): লিউটিনাইজিং হরমোনের দ্বিতীয় প্রভাবে গ্রাফিয়ান ফলিকল কর্পাস লুটিয়ামে (corpus luteum; ল্যাটিন luteus = yellow) পরিবর্তিত হয়। কর্পাস লুটিয়ামকে ইয়োলো বডিও বলা হয়। কর্পাস লুটিয়াম ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোন (progesterone hormone; গ্রিক pro = in favour of, ল্যাটিন gestare = to bear) তৈরি করে। ডিম্বাণু গ্রহণ ও ভ্রূণের বৃদ্ধির জন্য প্রোজেস্টেরন হরমোন জরায়ু প্রাচীরকে উপযোগী করে। একইসাথে ফলিকল উদ্দীপক হরমোন (FSH) উৎপাদনে বাধার সৃষ্টি করে। ডিম্বাণু নিষিক্ত হলে ভ্রূণ ও প্লাসেন্টা ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন তৈরির মাধ্যমে ভ্রূণের বৃদ্ধি ও বিকাশের পরিবেশ বজায় রাখে। ডিম্বাণু নিষিক্ত না হলে ১০-১২ দিন পর কর্পাস লুটিয়াম নষ্ট হয়ে যায় ফলে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়।


৪. রজঃস্রাবীয় পর্যায় বা দশা (Menses or menstrual phase)  : কর্পাস লুটিয়াম ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন উৎপাদন বন্ধ হলে জরায়ুর রক্তজালক ফেটে যায়। ফলে ডিম্বাণু, মিউকাস ও রক্তসহ এন্ডোমেট্রিয়াম। ভেঙে গিয়ে সারভিক্স ও যোনিপথে জরায়ু থেকে বের হয়ে আসতে শুরু করে। একেই রজঃস্রাব (menstruation or menses) বলে। রজঃস্রাবের দ্বিতীয় দিন ফলিকল উদ্দীপক হরমোন উৎপাদন শুরু হয় এবং চক্রের পুনরাবৃত্তি ঘটে।


Leave a Comment