ডাল্টনের পরমাণুবাদের চারটি স্বীকার্য (Four Postulates of Dalton's Atomic Theory) :



প্রতিটি মৌলিক পদার্থই ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র বস্তু কণা দ্বারা গঠিত। এই বস্তু কণাগুলোকে সরল পরমাণু (Simple Atom) বলে। এরা অবিনশ্বর, অখণ্ডনীয় এবং যে কোন রাসায়নিক পরিবর্তনেই এদের অখণ্ডনীয়তা অক্ষুণ্ণ থাকে।


। একই মৌলিক পদার্থের পরমাণুসমূহ সম-ধর্মী এবং সম ওজন বিশিষ্ট। কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন মৌলিক পদার্থের পরমাণুসমূহ ভিন্ন ধর্মী এবং ভিন্ন ওজন বিশিষ্ট। যেমন- হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের ক্ষেত্রে হাইড্রোজেনের সকল পরমাণুর ওজন এবং ধর্ম একই। এভাবে অক্সিজেনের সকল পরমাণুর ওজন ও ধর্ম একই। কিন্তু একটি হাইড্রোজেন পরমাণু ও একটি অক্সিজেন পরমাণুর ধর্ম সম্পূর্ণ আলাদা। এ ছাড়া দুটির ওজনও ভিন্ন। অক্সিজেনের একটি পরমাণু হাইড্রোজেনের একটি পরমাণু অপেক্ষা 16 গুণ ভারী।


৩। দুই বা ততোধিক বিভিন্ন মৌলের পরমাণুর মধ্যে রাসায়নিক সংযোগ বা পুনর্বিন্যাস ঘটলে যৌগিক পদার্থ উৎপন্ন হয়। সংযোগ বা পুনর্বিন্যাস এক একটি পূর্ণ সরল সংখ্যায় অনুপাতে হয়। যেমনঃ 1:1, 1:2, 2:1, 1:3.2:3, 3:4 ইত্যাদি।


বিভিন্ন পরমাণুর রাসায়নিক সংযোগের ফলে যে পরমাণু সমষ্টি সৃষ্টি হয় ডালটন তাকে যৌগ পরমাণু (Compound Atom) নামে অভিহিত করেন। এরা সকলেই যৌগিক পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণা। যথা-NH, এর ক্ষেত্রে একটি নাইট্রোজেন পরমাণুর সঙ্গে ৩টি হাইড্রোজেন পরমাণুর সংযোগের ফলে অ্যামোনিয়া উৎপন্ন হয়। এখানে নাইট্রোজেন ও হাইড্রোজেন পরমাণুর অনুপাত 1:3 যা একটি পূর্ণ সংখ্যায় সরল অনুপাত।


৪। মৌলগুলোর তুল্য ওজন দ্বারা পরমাণুগুলোর তুল্য ওজন বুঝানো হয়।


 ডাল্টনের পরমাণুবাদের সীমাবদ্ধতা (Limitations of Dalton's Atomic Theory):



১। অবিভাজ্য একক কণা দ্বারা পরমাণু গঠিত, ডাল্টনের এই সিদ্ধান্ত এখন আর যথার্থ নয়। মূলত ইলেকট্রন, প্রোটন ও নিউট্রন- এই তিনটি প্রাথমিক কণা দ্বারা পরমাণু গঠিত। এর গঠন খুব জটিল।


২। তার মতবাদ অনুসারে, একই মৌলের সকল পরমাণুর ভর অভিন্ন হবে। সাম্প্রতিক আবিস্কারের ফলে দেখা যায় একই মৌলের বিভিন্ন ভরের পরমাণু রয়েছে। এদেরকে আইসোটোপ বলে। যেমন- অক্সিজেনের আইসোটোপ তিনটি যার ভর সংখ্যা যথাক্রমে 16. 17318।


৩। ডাল্টনের মতবাদে, মৌলের ক্ষুদ্রতম কণা ও যৌগের ক্ষুদ্রতম কণার মধ্যে কোন পার্থক্য দেখান হয় নাই। কেবল মাত্র মৌলের সরল পরমাণু এবং যৌগের যৌগিক পরমাণুর কথা বলা হয়েছে।


৪। রাসায়নিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে পরমাণুকে একক হিসাবে ধরা হলেও বিক্রিয়া শেষে যে বস্তুর অস্তিত্ব পাওয়া যায়, আধুনিক মতে এদেরকে অণু বলা হয়। 3


১৫। এই মতবাদে বিভিন্ন মৌলের পরমাণুর ভর বিভিন্ন হবে। আধুনিককালে দেখা যায় যে, একই পারমাণবিক ভর বিশিষ্ট বিভিন্ন মৌল রয়েছে। এই জাতীয় পরমাণুকে আইসোবার (Isobar) বলে। যেমন- সেলিনিয়াম (335c76) ও জার্মেনিয়াম (32 Ge76) এর প্রত্যেকেরই পারমাণবিক ভর 76।


৬। গে-লুসাকের গ্যাস আয়তন সূত্রকে ডালটনের পরমাণুবাদ অনুসারে ব্যাখ্যা করা যায় না।


৭। বিভিন্ন জৈর যৌগের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, পরমাণুসমূহের রাসায়নিক সংযুক্তি সরল অনুপাতে হয় না।

Leave a Comment