ট্যাক্সিস


 ট্যাক্সিস: সচল গতিময় প্রাণী যখন বিভিন্ন উদ্দীপনায় সাড়া দিয়ে নির্দিষ্ট গতিপথের দিকে চলাচল করে তখন এ ধরনের স্থানান্তরজনিত গমনাগম আচরণকে ট্যাক্সিস বলে। ট্যাক্সিস প্রাণীদের এক ধরনের স্বয়ংক্রিয় অভিযোজন। ট্যাক্সিস এর প্রধান শর্ত হলো প্রাণীর স্থান পরিবর্তন। অর্থাৎ কোনো বাহ্যিক উদ্দীপক দ্বারা প্রাণীর চলাচলের গতিকে প্রভাবিত বা ত্বরান্বিত করাই হলো ট্যাক্সিস।

ট্যাক্সিসের প্রকার বহিঃউদ্দীপকের উপর ভিত্তি করে ট্যাক্সিস ধনাত্মক ক বা ঋণাত্মক হতে পারে। কোন উদ্দীপকের অভিমুখে ( গমনকে ধনাত্মক ট্যাক্সিস এবং বিপরীতমুখী গমনকে ঋণাত্মক ট্যাক্সিস ট্যাক্সিসকে নিম্নলিখিত ভাগে ভাগ করেন: ট্যাক্সিস বলে। উদ্দীপনার উৎসের উপর ভিত্তি করে বিজ্ঞানীরা

১. ফটোট্যাক্সিস (Phototaxis): আলোক উদ্দীপনায় সাড়া দিয়ে প্রাণীর স্থানান্তরকে ফটোট্যাক্সিস বলে। আলোর উৎসের প্রতি আকর্ষণতে ধনাত্মক এবং বিকর্ষণকে ঋণাত্মক ফটোট্যাক্সিস বলে। যেমন- উইপোকা আলোর প্রতি ধনাত্মক এবং আরশোলা ঋণাত্মক ফটোট্যাক্সিস প্রদর্শন করে।

২. থার্মোট্যাক্সিস (Thermotaxis): তাপীয় উদ্দীপনায় সাড়া দিয়ে প্রাণীর যে স্থানান্তর ঘটে তাকে থার্মোট্যাক্সিস বলে। Euglena, Amoeba, Paramecium ইত্যাদি এককোষী প্রাণী অধিক উত্তাপ থেকে সর্বদা দূরে সরে গিয়ে থার্মোট্যাক্সিস প্রদর্শন করে।


৩. কেমোট্যাক্সিস (Chemotaxis) রাসায়নিক দ্রব্যের প্রতি সাড়া দিয়ে প্রাণীর গমনাগমনকে কেমোট্যাক্সিস বলে। যেমন- Paramecium অনেক রাসায়নিক দ্রব্যের প্রতি ঋণাত্মক সাড়া প্রদান করে তবে মৃদু এসিডের প্রতি এরা ধনাত্মক কেমোট্যাক্সিস প্রদর্শন করে। 

৪. থিগমোট্যাক্সিস (Thigmotaxis) যখন কোন প্রাণী তার চলার পথে স্পর্শ ইন্দ্রিয় দ্বারা স্থানান্তরে অনুপ্রাণিত হয় তখন তাকে থিগমোট্যাক্সিস বলে। এটি ধনাত্মক বা ঋণাত্মক হতে পারে।

৫. হাইড্রোট্যাক্সিস (Hydrotaxis): আর্দ্রতা যখন প্রাণীর চলাচলকে প্রভাবিত করে তখন তাকে হাইড্রোট্যাক্সিস বলে।

৬. অ্যানিমোট্যাক্সিস (Anemotaxis): কোনো প্রাণীর বাতাসের প্রতি সাড়া প্রদর্শনকে অ্যানিমোট্যাক্সিস বলে। বায়ু প্রবাহের অনুকূলে প্রাণীর গমনকে ধনাত্মক এবং প্রতিকূলে গমনকে ঋণাত্মক অ্যানিমোট্যাক্সিস বলে।

৭. রিওট্যাক্সিস (Rheotaxis): পানি প্রবাহ বা স্রোতের প্রতি সাড়া দিয়ে প্রাণীর স্থানান্তরকে রিওট্যাক্সিস বলে। যেমন- কার্ণ জাতীয় মাছ প্রজননের সময় পানিস্রোতের বিপরীতে চলে ধনাত্মক রিওট্যাক্সিস প্রদর্শন করে।

৮. জিওট্যাক্সিস (Geotaxis): মাধ্যাকর্ষণ শক্তি দ্বারা প্রভাবিত হয়ে প্রাণীর চলাচলকে জিওট্যাক্সিস বলে। যেমন- খাদ্যের গন্ধানে ক্যাটারপিলার লার্ভা উপরের দিকে এবং এদের পিউপা নিচের দিকে গরালে কোরিওট্যান্সিস বলো। যেমন-খাদ্যের জিওট্যাক্সিস প্রদর্শন করে।


৯. গ্যালভানোট্যাক্সিস (Galvanotaxis): বিদ্যুৎ প্রবাহ দ্বারা উদ্দীপিত হয়ে প্রাণীর স্থানান্তরকে গ্যালভানোট্যাক্সিস বলে। যেমন - চিংড়িধারী কোনো অ্যাকুরিয়ামে দুর্বল তড়িৎপ্রবাহ চালানো হলে সকল চিংড়ি অ্যাকুরিয়ামে ধনাত্মক প্রান্তের দিকে ছুটতে থাকে।


১০. স্টেরোট্যাক্সিস (Sterotaxis): সমতল ও মসৃণতলে প্রাণীর চলাচলের সাড়াদানকে স্টেরোট্যাক্সিস বলে। যেমন- ইঁদুর, - টিকটিকি ইত্যাদি প্রাণী মসৃণ প্রাচীর কিংবা ছাদের সিলিং বেয়ে চলতে পারে। এরূপ চলাচলকে ঋণাত্মক স্টেরোট্যাক্সিস বলে।


১১. সনোট্যাক্সিস (Sonotaxis): শব্দের প্রতি সাড়া প্রদান করে প্রাণীর চলাচলকে সনোট্যাক্সিস বলে। পানিতে শব্দ সৃষ্টি করলে কিছু মাছ ধনাত্মক এবং কিছু মাছ ঋণাত্মক সনোট্যাক্সিস প্রদর্শন করে। ১২. সাপেক্ষ ট্যাক্সিস (Conditionl taxis): যখন কোনো প্রাণী একই সময়ে দুই বা ততোধিক ট্যাক্সিস প্রদর্শন করে তখন ■ ঢাকে সাপেক্ষ ট্যাক্সিস বলে। যেমন- কিছু প্রজাপতি ডিম পাড়ার জন্য বিশেষ উদ্ভিদের গন্ধ ও সবুজ পাতার দিকে গমন করে। ১৩. হেলিওট্যাক্সিস (Heliotaxis): যখন কোনো প্রাণী আলোর উৎস হতে দূরে যায় না। কিন্তু ছায়া পছন্দ করে তখন তাদের - এরূপ আচরণকে হেলিওট্যাক্সিস বলে।


• পরিশেষে বলা যায় যে, ট্যাক্সিস প্রাণীদের এমন একটি স্থানান্তর গমন জনিত আচরণ যার মাধ্যমে প্রাণীরা নির্দিষ্ট উদ্দীপকের ■ প্রতিকূল বা অনুকূলে সাড়া দিয়ে প্রকৃতিতে সুবিধাজনক অবস্থানে স্থানান্তরিত হয়। প্রত্যেক প্রাণীর জীবনে এটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ - প্রাণীদের প্রকৃতিতে টিকে থাকতে সহায়তা করে


Leave a Comment