নিষেক 



নিষেক: যে জটিল প্রক্রিয়ায় হ্যাপ্লয়েড স্ত্রী জননকোষ অভ্যন্তরে হ্যাপ্লয়েড (n) পুং জনন কোষ অনুপ্রবিষ্ট হয়ে ডিপ্লয়েড (2n) জাইগোট গঠিত হয় এবং ক্লিভেজ তথা জনবিকাশের সূচনা করে তাকে নিষেক (Fertilization) বলে। নিষেকের ফলে জনন কোষ দুটি একীভূত হয়ে যে কোষের সৃষ্টি হয় তাকে জাইগোট বলে।

অর্থাৎ নিষেক হলো, দুটি বিষম জনন কোষের মিলন যাতে ডিম্বাণু সক্রিয় হয় এবং স্ত্রী ও পুরুষ হ্যাপ্লয়েড সংখ্যক ক্রোমোজোমের মিলনের ফলে জীবের ডিপ্লয়েড ক্রোমোজোম সংখ্যা পুনঃ প্রতিষ্ঠিত হয়।

নিষেকের প্রকারভেদ: বিভিন্ন বিষয়ের উপর ভিত্তি করে নিষেক বিভিন্ন প্রকার হয়ে থাকে। যেমন: সংঘটন মাধ্যমের উপর

ভিত্তি করে নিষেক দুপ্রকার। যথা: ১. বহিঃনিষেক ও ২. অন্তঃনিষেক।


১. বহিঃনিষেক: সাধারণত প্রাণীদেহের বাইরে বিশেষ করে জলীয় মাধ্যমে সংঘটিত নিষেককে বহিঃনিষেক বলে। অধিকাংশ নিম্ন শ্রেণির প্রাণীতে বহিঃনিষেক ঘটে। এই অবস্থায় শুক্রাণু ও ডিম্বাণু জলে অথবা জলীয় মাধ্যমে স্বাধীন ভাবে বিচরণ করার সময় পাশাপাশি এলে নিষেক সম্পন্ন হয়।


২: অন্তঃনিষেক: স্ত্রী দেহের জননকোষে সংঘটিত নিষেককে অন্তঃনিষেক বলে। সাধারণত সঙ্গমের মাধ্যমে পুরুষ প্রাণী তার শুক্রাণু স্ত্রী জননাঙ্গে প্রবেশ করিয়ে এ ধরনের নিষেক ঘটায়। অন্তঃনিষেক ডাঙ্গায় বসবাসকারী অধিকাংশ প্রাণীর অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

parade can destination on does to stop tan dan শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর সংখ্যা এবং এদের প্রোনিউক্লিয়াসের মিলনের ভিত্তিতে নিষেক পাঁচ প্রকার। যথা:


১. মনোস্পার্মিক বা এক শুক্রাণু নিষেক: একটি মাত্র শুক্রাণু দ্বারা সংঘটিত নিষেক প্রক্রিয়াকে মনোস্পার্মিক বা এক শুক্রাণু এষেক বলে। যেমন: : কঠিনাস্থি মাছ, ব্যাঙ ও ও স্তন্যপায়ী প্রাণীদের এইরূপ নিষেক হয়।


২. পলিস্পার্মিক বা বহু শুক্রাণু নিষেক: একাধিক শুক্রাণু যে নিষেকে অংশগ্রহণ করে এবং ডিম্বাণুতে প্রবেশ করে সেই নিষেককে কলিস্পার্মিক বা বহু শুক্রাণু নিষেক বলে। যেমন: তরুণাস্থি মাছ, ব্যাঙ, সরীসৃপ পখি ইত্যাদিতে এরূপ নিষেক দেখা যায়। ৩. পলিঅ্যান্ড্রি: যখন দুইটি পুরুষ প্রোনিউক্লিয়াস একটি স্ত্রী প্রোনিউক্লিয়াসের সাথে মিলিত হয়, তখন ঐ রূপ নিষেককে গলিঅ্যান্ড্রি বলে। মানুষ ও ইঁদুরে এইরূপ নিষেক দেখা যায়।


৪. পলিগ্যামি: যখন দুইটি স্ত্রী প্রোনিউক্লিয়াসের সাথে একটি পুরুষ প্রোনিউক্লিয়াসের মিলন হয় তখন এই রূপ নিষেককে গলিগ্যামি বলে। যেমন: সমুদ্র অরচিন, Neries কিছু উভচর ও খরগোসের নিষেক।


৫. গাইনোজেনেসিস: যখন কোনো শুক্রাণু ডিম্বাণুকে সক্রিয়করণ করে কিন্তু তার প্রোনিউক্লিয়াসটি ডিম্বাণুর প্রোনিউক্লিয়াসের সাথে মিলিত হয় না, তখন ঐ রূপ মিলনকে গাইনোজেনেসিস নিষেক বলে। যেমন: Planeria এবং অনেক সূতাকৃমিতে এরূপ নিষেক দেখা যায়।


এছাড়া প্রকৃতিতে আরও দুই ধরনের নিষেক পরিলক্ষিত হয়। যথা:


১. পরনিষেক: উভয় লিঙ্গ 'Hermaphrodite' প্রাণীতে সাধারণত ডিম্বাণু ও শুক্রাণু একই সময়ে পরিপক্কতা লাভ করে না। ফলে একই প্রাণী এক সময় পুরুষ ও অন্য সময় স্ত্রী প্রাণীর মতো আচরণ করে এবং একলিঙ্গ প্রাণীর অনুরূপ এদের দুটি প্রাণীর মিলনের ফলে সাধিত নিষেককে পর-নিষেক বলে।


২. স্ব-নিষেক: কিছু কিছু উভয়লিঙ্গ প্রাণীতে নিষেকের জন্য দ্বিতীয় সঙ্গীর প্রয়োজন হয় না। উভয় প্রকার জননকোষ মোটামুটি একই সময় পরিপক্কতা লাভ করার ফলে একই প্রাণীর শুক্রাণু ও ডিম্বাণু মিলিত হয়ে যে নিষেক সম্পন্ন করে তাকে স্ব-নিষেক বলে।

Leave a Comment