অ্যানিলিডা ও আর্থ্রোপোডা পর্বের পরিচিতি ও বৈশিষ্ট্য


আর্থ্রোপোডা 


Annelida (অ্যানিলিডা) বা অঙ্গুরীমাল


অ্যানিলিডা


[ল্যাটিন, annulus = ছোট আংটি + cidos = রূপ। ১৮৯০ সালে Lamarck এ পর্বের নামকরণ করেন। এ পর্বের শনাক্তকৃত জীবন্ত প্রজাতির সংখ্যা ১৭,৩৮৮টি।।


সংক্ষিপ্ত পরিচিতি: অ্যানিলিড প্রাণী দৈহিক গড়নের দিক থেকে অনন্য। অঙ্গ-তন্ত্র মাত্রার গঠন ছাড়াও প্রাণিগুলো দ্বিপার্শ্বীয় প্রতিসম ও ত্রিস্তরবিশিষ্ট। অ্যানিলিডে আগের পর্বগুলোর চেয়ে অধিকতর কেন্দ্রীভূত স্নায়ুতন্ত্র এবং জটিলতর সংবহনতন্ত্র বিবর্তনের গতিপথে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। পৃথিবীতে অ্যানিলিড সদস্যরা ব্যাপক বিস্তৃত, কিছু প্রজাতি পৃথিবীর সব দেশেই পাওয়া যায়। পলিকিটজাতীয় অ্যানিলিডগুলো অধিকাংশই সামুদ্রিক, সমুদ্রের তলদেশে বা পৃষ্ঠতলে বিচরণ করে। কেঁচো ও জোঁক জাতীয় সদস্যরা স্বাদুপানিবাসী বা স্থলচর। স্থলচর সদস্যগুলো কাদা বা বালিতে গর্তবাসী,কিংবা ভেজা জায়গায় পাতার নিচে বাস করে। অনেক জোঁক প্রজাতি রক্তপায়ী। বিভিন্ন প্রজাতির অ্যানিলিডা গোষ্ঠী পৃথিবীর বাস্তুতন্ত্রে অনন্য ভূমিকা পালন করে চলেছে। 



পর্ব Annelida-র বৈশিষ্ট্য


১.দেহ লম্বা, নলাকার, দ্বিপার্শ্বীয় প্রতিসম, এপিথেলিয়াম নিঃসৃত পাতলা কিউটিকল-এ আবৃত এবং প্রকৃত সিলোমযুক্ত।


২. প্রকৃত খন্ডকায়ন (true segmentation) উপস্থিত, আংটির মতো অনেকগুলো একই রকম খণ্ডক নিয়ে দেহ গঠিত। এদের চলন অঙ্গ কাইটিনময় র্সিটি (setae) বা পেশল প্যারাপোডিয়া (parapodia)।




৩. দেহের প্রায় প্রতিটি খণ্ডকে অবস্থিত নেফ্রিডিয়া (nephridia) নামক প্যাঁচানো নালিকা প্রধান রেচন অঙ্গ হিসেবে কাজ করে।


৪. রক্ত সংবহনতন্ত্র বন্ধ (closed) প্রকৃতির, রক্তের বর্ণ লাল। রক্তরসে হিমোগ্লোবিন, হিমো এরিথ্রিন অথবা ক্লোরোক্রুয়োরিন দ্রবীভূত অবস্থায় থাকে।

৫. পৌষ্টিক নালি নলাকার ও সম্পূর্ণ; মুখ ও পায়ুছিদ্র সমন্বিত। 

৬. পরোক্ষ পরিস্ফুটনের ক্ষেত্রে মুক্ত সাঁতারু ট্রোকোফোর (trochophore) নামক লার্ভার বিকাশ ঘটে।

৭. অ্যানিলিড সদস্যরা মিঠা পানি, নোনা পানি বা স্থলে বাস করে। অনেকে স্বাধীনজীবী, কিছু সংখ্যক পরজীবীও বটে।


Phylum-7: Arthropoda (আর্থ্রোপোডা) বা সন্ধিপদী প্রাণী



গ্রিক, arthros = সন্ধি + podos = পা। ১৮৪৫ সালে Sicbold এ পর্বের নামকরণ করেন। এ পর্বের শনাক্তকৃত জীবন্ত প্রজাতির সংখ্যা ১.২৫৭,০৪০টি।।


সংক্ষিপ্ত পরিচিতি: Arthropoda হচ্ছে প্রাণিজগতের সবচেয়ে বড় পর্ব। পৃথিবীর তিন-চতুর্থাংশ প্রাণী এ পর্বের অন্তর্গত। শুধু সংখ্যাগত দিক থেকে নয়, দেহগঠন, বর্ণময়তা, বসতি, স্বভাব প্রভৃতি বৈচিত্র্যেও এসব প্রজাতি অনন্য অবস্থান দখল করে আছে। পৃথিবীর নদী-নালা, খাল-বিল, পাহাড়-পর্বত, সমুদ্র-মোহনা, বরফ-মরুজ এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে আর্থ্রোপোড সদস্য পাওয়া যাবে না। এরা সর্বভুরু, মুক্তজীবী বা পরজীবী। এদের চলন, শ্বসন, রক্ত- সংবহন প্রভৃতি তন্ত্রও বৈচিত্রময়। আর্থ্রোপোডের সামাজিক জীবন প্রাণিজগতে অনন্য ও বিস্ময়কর নজির স্থাপন করেছে। পঞ্চইন্দ্রিয় অত্যন্ত কার্যক্ষম বলে আর্থ্রোপোড সদস্যরা পরিবেশ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে পেরেছে।



পর্ব Arthropoda-র বৈশিষ্ট্য


১. এদের দেহ সন্ধিযুক্ত উপাঙ্গবিশিষ্ট, দ্বিপার্শ্বীয় প্রতিসম, খণ্ডকায়িত এবং ট্যাগমাটা (tagmata)-য় বিভক্ত।


২.মস্তকে একজোড়া বা দুজোড়া অ্যান্টেনা (antenna) ও সাধারণত একজোড়া পুঞ্জাক্ষি (compound eyes) থাকে।


৩. বহিঃকঙ্কাল কাইটিন (chitin) নির্মিত এবং নিয়মিত মোচিত হয়।


৪. সিলোম সংক্ষিপ্ত ও অধিকাংশ দেহগহ্বর রক্তে পূর্ণ হিমোসিল (haemococl)।


৫. পৌষ্টিকতন্ত্র সম্পূর্ণ। উপাঙ্গ পরিবর্তিত হয়ে মুখোপাঙ্গ (mouth parts) গঠিত হয় যা বিভিন্ন খাদ্য গ্রহণে অভিযোজিত।


৬. রক্ত সংবহনতন্ত্র উন্মুক্ত (open); এটি পৃষ্ঠীয় সংকোচনশীল হৃৎযন্ত্র, 'ধমনি এবং হিমোসিল নিয়ে গঠিত।


৭. রেচন অঙ্গ ম্যালপিজিয়ান নালিকা (malpighian tubule)। এছাড়াও রয়েছে কক্সাল (coxal), অ্যান্টেনাল (antennal) বা ম্যাক্সিলারি (maxillary) গ্রন্থি।


৮.স্ত্রী-পুরুষ পৃথক, সাধারণত অন্তঃনিষেক সম্পন্ন হয় এবং প্রায় ক্ষেত্রেই রূপান্তর (metamorphosis) ঘটে।


৯. এরা স্থলচর, পানিচর, মুক্তজীবী, নিশ্চল, সহবাসী বা পরজীবী হিসেবে বাস করে।


Leave a Comment