মেরুদন্ডীদের তিনটি ভ্রুনসৃতরের পরিনতি



  গ্যাস্টুলেশন এর ফলে সৃষ্ট এক্টোডার্ম, মেসোডার্ম এবং এন্ডোডার্ম ভ্রূণের গঠন এবং বিকাশের যাবতীয় উপাদানের উৎস। এমন এ তিনটি কারনে জার্মলেয়ার বা জার্মিনাল লেয়ার (germinal layers) বলা হয়। জার্মলেয়ার্স বলতে তার উপাদানের উৎস। এবং এভোডার্ম এ তিনটি স্তরকেই বুঝায়। নিম্নশ্রেণির কিছু অমেরুদণ্ডী প্রাণী ব্যতীত সব প্রাণীর দেহই এ তিনটি মূল কোলাতরে গঠিত। ভ্রূণে এ স্তর তিনটি ক্রমান্বয়ে বিভিন্ন কোষপুঞ্জ বিভক্ত হয়ে মুখ্য অঙ্গ অঙ্কুর (primary organ rudiments)  স্তরে চিহ্নিত হয়। এ সবের কোনো কোনোটি স্বভাবের দিক থেকে বেশ জটিল এবং যতক্ষণ পর্যন্ত না ভ্রূণের বিভিন্ন অঙ্গ গৌণ অঙ্গ অঙ্কুর (secondary organ rudiments) হিসেবে চিহ্নিত হয় ততক্ষণ পর্যন্ত এদের পুনর্বিভক্তি চলতে থাকে।


এক্টোডার্ম: গঠনোমুখ ভ্রূণের দেহের সমগ্র বাইরের আবরণী গঠিত হয় এক্টোডার্মের এক সারি কোষ দিয়ে। পরিস্ফুরণের সময় *দেহের অন্যান্য অংশ যখন বিশেষ বিশেষ কোষগুচ্ছ থেকে তৈরি হবার প্রস্তুতি নেয় ঠিক তখনই মেসোডার্মের মেসেনকাইম কোষসমূহ সরে এসে এক্টোডার্মের ঠিক নিচে সারিবদ্ধভাবে বিন্যস্ত হয়ে যায়। কোষের এ দু'সারি সম্মিলিতভাবে গঠন করে দেহের ত্বক বা বহিরাবরণ (skin or integument)। এক্টোডার্ম থেকে উদ্ভব হয় ত্বকের এপিডার্মিস (epidemis) বা বহিস্তক, আর এর নিচের যেনেনকাইম (mesenchyme) গঠন করে ডার্মিস (dermis) বা অন্তত্বক। ত্বকের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত অনেক গঠনও (suucture) তৈরি হয় এপিডার্মিস থেকে যেমন- বিভিন্ন প্রকার গ্রন্থি, চুল, নখ, পালক, শিং, খুর, আঁশ এবং চোখের লেন্স। এসব অংশ তাই এক্টোডার্ম-উদ্ভূত। আর্কেস্টেরন, যা এক সময় পরিপাকনালি গঠন কাব, তার ভিতরের দিকে আচ্ছাদিত থাকে এন্ডোডার্মের সারিবদ্ধ কোষ দিয়ে। এক সময় রাস্টোপোরের (blastopore) মাধ্যমে এটি বাইরে উন্মুক্ত থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে শীঘ্রই তা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে আর্কেন্টেরন একটি বন্ধ নালির রূপ নেয়, তাতে না থাকে মুখ না থাকে পায়ু। অল্পক্ষণ পরেই ভ্রূণের সামনের দিকের অক্টোডার্মে একটি খাঁজের আবির্ভাব হয় যাকে স্টোমোডিয়াম (stomodaeum) বলা হয়। পরে স্টোমোডিয়াম 'মুখ'-এ রূপান্তরিত হয়ে পরিপাক নলীর অন্য অংশের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ভ্রূণের পশ্চাৎদিকেও অনুরূপ আর একটি খাঁজ দেখা দেয় যা প্রোক্টোডিয়াম (proctodaeum) নামে পরিচিত হয়। এ প্রোক্টোডিয়াম পরে পায়ু বা ক্লোয়েকার অংশ হয়ে পরিপাক নালির সঙ্গে যুক্ত হয়। স্টোমোডিয়ামে এক্টোডার্মে গঠিত অভ্যন্তরীণ আবরণী ঠোঁট ও মুখের আবরণ,




দাঁতের এনামেল, মুখ গহ্বরের গ্রন্থি, জিহ্বার আবণ ইত্যাদি তৈরি করে। অপরদিকে প্রোক্টোডিয়ামের এক্টোডার্ম আবরণী পায়ুর অভ্যন্তরীণ আবরণ, ক্লোয়েকার অংশ এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে পায়ু ও ক্লোয়েকার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গ্রন্থি গঠনে অংশ নেয়।


এক্টোডার্ম থেকেই তৈরি হয় স্নায়ু নালিকা (neural tube) যা পরবর্তী সময়ে মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুরুজ্জু গঠনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় স্নহতন্ত্রের উদ্ভব ঘটায়। তাছাড়া যাবতীয় সংবেদী অঙ্গ প্রধানত এক্টোডার্ম থেকেই উদ্ভব হয়।


মেসোডার্ম: ভ্রণ গঠনের সময় মেসোডার্মের প্রধান আবির্ভাব হয় এক্টোডার্ম ও এন্ডোডার্মের মাঝখানে। তারপর শ্রীঘ্রই এর কোষসমূহ এপিমেয়ার (epimere), মেসোমেয়ার (mesomere) এবং হাইপোমেয়ার (hypomere) হিসেবে চিহ্নিত হয়ে সুনির্দিষ্ট অঙ্গ গঠনে তৎপর হয়ে ওঠে। এপিমেয়ারের কিছু অংশ যেসেনকাইম ত্বকের ডার্মিস গঠন করে, কিছু অংশ তৈরি করে নটোকর্ড যা পরে মেরুদন্ডী প্রাণীতে অস্থিময় হয়ে মেরুদণ্ডে ২৭ নেয়। এপিমেয়ারের বাকি অংশকে মায়োটোম (Myotome) বলা হয়। এখান থেকেই তৈরি হয় শরীরের বেশির ভাগ পেশি।


মেসোমেয়ার প্রধানত গঠন করে রেচন ও প্রজনন অঙ্গাদি এবং এদের সঙ্গে যুক্ত নালিসমূহ। তবে নালিসমূহের প্রান্তীয় অংশ এধারণত এক্টোডার্ম অথবা এন্ডোডার্মের আবরণী কলার সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়।


মেসোডার্মের হাইপোমেয়ার বিভিন্নভাবে বিন্যস্ত হয়ে ঐচ্ছিক পেশি, হৃৎপিণ্ড, দেহগহ্বরের অভ্যন্তরীণ আবরণ, হৃদাবরণ Quicardium) ইত্যাদি গঠন করে। তাছাড়া অস্থি বা কোমলাস্থিতে তৈরি উপাসিক কঙ্কাল, যোজককলা, রক্ত কণিকা, রক্তনালি লসিকা (lymph), লসিকা, নালি, লসিকা গন্ড, এবং রক্ত উৎপাদনের কলার উদ্ভব হয় মেসোডোর্মে মেসেনকাইম থেকে। চোখের বিন্দ্রি অংশ, দাঁতের ডেন্টাইন এবং সুপ্রারিনাল কর্টেক্সও তৈরি হয় মেসেনকাইম থেকে।

এন্ডোডার্ম:  আর্কেন্টেরন বা আদি পরিপাকনালি সম্পূর্ণরূপেই এন্ডোডার্মে গঠিত। আর এখান থেকেই উদ্ভব হয় এন্ডোডার্মে গঠিত হয় দেহের অন্যান্য অঙ্গাদি। ভ্রূণের ক্রমবর্ধনের সাথে সাথে আর্কেন্টেরন একদিকে যেমন প্রসারিত হয়, অপরদিকে এখান থেকে অন্যান্য অংশের বিভেদনও (differentiation) শুরু হয় প্রায় একই সঙ্গে। গল্পবিল, অন্ননালি, পাকস্থলী এবং অস্ত্রের গঠনের সঙ্গে সঙ্গে বৃক্ক এবং অগ্ন্যাশয়ের আবির্ভাব ঘটে। এসময় গলবিল অঞ্চলে কতকগুলো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার অবতারণা হয়। এর পার্শ্বদেশ থেকে কযেক জোড়া ক্ষুদ্র থলিকা উদ্ভবের মাধ্যমে তৈরি হয় ফুলকারন্ধ্র, মধ্যকর্ণ, টনসিল, থাইমাস এবং থাইরয়েড ও প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থি। যেমন- মেরুদণ্ডী প্রাণী বাতাস থেকে শ্বাস নেয় সেক্ষেত্রে গলবিলের অঙ্কীয় ভাগের এক উপবৃদ্ধি (outgrowth) ল্যারিংস, শ্বাসনালি এবং ফুসফুসের উদ্ভাবন ঘটায়। সরীসৃপ, পাখি এবং স্তন্যপায়ী প্রাণীর ভ্রূণে অ্যালানটয়েজ (allantois) নামে এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের সৃষ্টি হয় আর্কেন্টেরনের। পশ্চাৎভাগ থেকে। জন্মের সময় এ অঙ্গ বিলুপ্ত হলেও এর এক অংশ থেকে গঠিত হয় মূত্রনালি এবং তদসংলগ্ন গ্রন্থি।

Leave a Comment