আলট্রাফিলট্রেশন বা অতিসুক্ষ্ণ পরিস্রাবন


মুত্র সৃষ্টি 


 মূত্র সৃষ্টি: বিজ্ঞানী Cushney (১৯১৭)-এর মতে, নাইট্রোজেনঘটিত বর্জ্য পদার্থ রক্তের মাধ্যমে বৃক্কে আসার পর তিনটি পৃথক পৃথক ধাপে মূত্র সৃষ্টি হয়। যথা- (১) অতিসূক্ষ্ম পরিস্রাবণ (২) নির্বাচনমূলক পুনঃশোষণ (৩) সক্রিয় ক্ষরণ।


১. অতিসূক্ষ্ম পরিস্রাবণ: মূত্র তৈরির প্রথম ধাপ হলো রক্তের অতিসূক্ষ্ম পরিস্রাবণ। নেফ্রনের রেনাল করপাসলে এ পদ্ধতি সংঘটিত হয়। এ প্রক্রিয়ায় হৃৎপিণ্ড হতে পৃষ্ঠীয় ধমনি, রেনাল ধমনি এবং অ্যাফারেন্ট আর্টারিওলের মাধ্যমে রক্ত অতি উচ্চ চাপে গ্লোমেরুলাসে প্রবেশ করে। সাধারণত অ্যাফারেন্ট আর্টারিওলের। তুলনায় ইফারেন্ট আর্টারিওলের ব্যাস সংকীর্ণ হওয়ায় গ্লোমেরুলাসে রক্তের উচ্চ চাপ সৃষ্টি হয়। এ হাইড্রোস্ট্যাটিক চাপে রক্তের প্রোটিন ও রক্তকণিকা ছাড়া সমস্ত পানি, লবণ, শর্করা, ইউরিয়া, ইউরিক অ্যাসিড প্রভৃতি কৈশিক জালিকার এন্ডোথেলিয়াম ও ভিত্তিঝিল্লি এবং রেনাল ক্যাপসুলের এপিথেলিয়াম ভেদ করে ক্যাপসুলার স্পেসে জমা হয়। এ পরিস্রুত তরলকে গ্লোমেরুলার ফিলট্রেট বা প্রাথমিক মূত্র বলে। অপরদিকে পরিসুত রক্ত পরে ইফারেন্ট আর্টারিওলে প্রবেশ করে। যে চাপের মাধ্যমে রক্তের দ্রাব্য বস্তু পরিস্রত হয়, তাকে কার্যকরী পরিস্রাবণ চাপ বলে।

২. টিউবিউলার পুনঃশোষণ (Tubular reabsorption) বা নির্বাচিত পুনঃশোষণ (Selective reabsorption): মোম্যানস ক্যাপসুল থেকে গ্লোমেরুলার ফিলট্রেট বৃক্কনালিকা বা রেনাল টিউবিউলে প্রবেশ করে। এখানে গ্লোমেরুলার কোষগুলো পুনঃশোষণের

ফিলট্রেটের ৮০% নির্বাচিত পদার্থ পুনঃশোষিত হয়ে রক্তে প্রবেশ করে। টিউবিউলের প্রাচীরের জন্য বিশেষভাবে অভিযোজিত। যেমন- (i) কোষগুলোর একপাশে মাইক্রোভিলাই ও বেসাল চ্যানেল থাকায় এদের শোষণতল বেশি, (ii) সাইটোপ্লাজমে বেশি সংখ্যক মাইটোকন্ড্রিয়া থাকে এবং (iii) রক্তের কৈশিক জালিকার সাথে ঘন সন্নিবিষ্ট থাকে।

রেনাল টিউবিউলসের বিভিন্ন অংশে যেসব পদার্থের পুরশোষণ হয় তা হলো-



1. প্রক্সিমাল বা নিকটবর্তী প্যাঁচানো নালিকা: এখানে গ্লোমেরুলার ফিলট্রেটের ৬০% পুনঃশোষিত হয়। গ্লুকোজ, আঅ্যামিনো এসিড, ভিটামিন, হরমোন, সোডিয়াম, পটাসিয়াম, ক্লারাইড, ফসফেট, বাইকার্বোনেট, পানি, কিছু ইউরিয়া ইত্যাদি এ অংশে পুনঃশোষিত হয়।


2. হেনলির লুপ:  এখানে সোডিয়াম, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্লোরাইড ও অভিস্রবণ প্রক্রিয়ায় পানি পুনঃশোষিত হয়।


3. ডিস্টাল বা দূরবর্তী প্যাঁচানো নালিকা: এখানে সোডিয়াম, পটাসিয়াম, হাইড্রোজেন, ক্লোরিন আয়ন ইত্যাদি পুনঃশোষিত হয়। অন্যদিকে ADH (অ্যান্টি ডাইইউরেটিক হরমোন) পানি পুনঃশোষণে সাহায্য করে।


4. সংগ্রাহী নালি: এখানে প্রধানত পানি এবং অল্প পরিমাণ CI. Na' ও ইউরিয়া পুনঃশোষিত হয়।


৩. টিউবিউলার ক্ষরণ বা সক্রিয় ক্ষরণ (Active scretion): বিপাক ক্রিয়ায় সৃষ্ট কিছু অপ্রয়োজনীয় উপজাত পদার্থ, যথা-ক্রিয়েটিনিন ও কিছু ইউরিয়া প্রক্সিমাল প্যাঁচানো

Leave a Comment