ম্যালথাসের তত্ব ও এর সমালোচনা


Malthus Theory


 ম্যালথাসের তত্ত্ব প্রকাশিত হওয়ার পর তত্ত্বটি বিভিন্নভাবে সমালোচিত হয়। বাস্তবে তাঁর তত্ত্বটি ঐ সময়ে চরম বিতর্কের ঝড় তুলেছিল এবং এখনও তত্ত্বটি প্রচণ্ডভাবে সমলোচিত হয়। তৎকালীন সমালোচকদের মধ্যে অন্যতম Oppenheim, Graham, Prof, Gray প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। যে সকল ক্ষেত্রে ম্যালথাস সমালোচিত হয়েছে তাদের কিছু সংখ্যক ক্ষেত্র নিম্নে আলোচনা করা হলো:


সমালোচনা:

১. ম্যালথাস তাঁর তত্ত্বে প্রমাণ করতে চেয়েছেন সমাজে প্রতিটি পরিবারই পরিবারের আকার বৃদ্ধিতে আগ্রহী এবং তন্মধ্যে যতগুলো সন্তান জন্মগ্রহণ করে তারা সকলেই বেঁচে থাকে। কিন্তু এটা সত্য নয়। কারণ দেখা গেছে যে, যে সকল সমাজে জন্মহার বেশি সেখানে মৃত্যুহারও বেশি।


২ ম্যালথাস তাঁর তত্ত্বে উল্লেখ করেছেন যে, বিবাহিত দম্পতি মিলনের অর্থই হচ্ছে সন্তানের জন্ম। কিন্তু এ মিলন শাশ্বত এবং নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। বাস্তবক্ষেত্রে এ কথা সত্য নয়। কারণ প্রত্যেকবার মিলনে সন্তান উৎপাদন সম্ভব হয় না।


৩. ম্যালঘাসের তত্ত্বে প্রতি ২৫ বছরে জনসংখ্যা দ্বিগুণ হওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এর ঐতিহাসিক কোনো ভিত্তি নেই। সমালোচকদের মতে, বর্তমানে মানুষ অযথা পরিবারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি করতে চায় না বরং এরা খুবই সচেতন। ম্যালথাস জ্যামিতিক হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করেছেন-তা বর্তমান প্রেক্ষাপটে ভুল-উন্নত শিক্ষা ও বৈজ্ঞানিক উন্নয়নের ফলে জীবনযাত্রার মান পাল্টে গেছে এবং সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিবারের সদস্য সংখ্যা কম রাখতে আগ্রহী।

৪. ম্যালথাস সন্দেহাতীতভাবে উল্লেখ করেছেন যে, কোনো শিশু একটি নির্দিষ্ট সময় পরে বংশবৃদ্ধি শুরু করে। কিন্তু শিশু যখন বংশবৃদ্ধি শুরু করে তখন তার শ্রমের দ্বারা কেবল নিজেই নয় বরং সমগ্র সমাজ উপকৃত হয় এবং শিশু পরিণামে সমাজের বোঝা নয় আশীর্বাদ হিসেবেই পরিগণিত হয়। কিন্তু ম্যালথাস শিশুকে সমাজের বোঝাস্বরূপ উল্লেখ করেছেন।


৫. ম্যালথাস তত্ত্বটি প্রণয়নের সময় ভাবতে পারেননি যে, কৃষি উৎপাদন ছাড়াও শিল্পায়ন, যোগাযোগ ও বণ্টন ব্যবস্থার উন্নতির মাধ্যমে জীবনযাত্রার মান উন্নত করা যায়। এছাড়া ম্যালথাস ভেবে নিয়েছিলেন যে, শুধুমাত্র কৃষিজ উৎপাদনই মানুষের আহার্য কিন্তু বিশ্বের বিশাল জনগোষ্ঠী মাছ ও মাংসভোজী, যে সকল ক্ষেত্রে ম্যালথাসীয় ধারণা ভুল বলে প্রমাণিত।

৬. ম্যালথাস উল্লেখ করেছেন জনসংখ্যা বৃদ্ধি সর্বদাই দেশের জন্য ক্ষতিকর। এটা সত্য নয় । দক্ষ জনশক্তি দেশের জন্য সম্পদ। এজন্যে পৃথিবীর অনেক দেশে জনশক্তির প্রয়োজনে জনসংখ্যা বৃদ্ধি উৎসাহিত করা হয়।

৭. ম্যালথাস তার তত্ত্বে জমির পরিমাণ ও খাদ্য উৎপাদন ক্ষমতাকে সীমিত ধরে নিয়ে ছিলেন। বাস্তবে কালের প্রেক্ষাপটে জমির পরিমাণ, উন্নত প্রযুক্তি, চাষ পদ্ধতির উন্নয়ন, উন্নত বীজ ও সেচের সাহায্যে জমিতে খাদ্য উৎপাদন কয়েকগুণ বৃদ্ধি করা সম্ভব। যার পূর্বাভাস ম্যালথাস প্রদান করেননি। 

ম্যালথাসের ধারণা অনুযায়ী মানুষ মাত্রই অনিয়ন্ত্রিত যৌন ভোগ বিলাসী, এটা সঠিক নয়। শিক্ষা, সংস্কৃতি, ধর্মীয় অনুশাসন প্রভৃতি মানবজীবনে যথেষ্ঠ প্রভাব বিস্তার করে। এছাড়া ম্যালথাস নগরায়ণ ব্যবস্থার কথা ভাবতে পারেনি, যার রাভাবে মানুষের রুচি ও দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে যায়। শিক্ষিত নারী ও পুরুষের জীবনবোধ মার্জিত হয়.

৯. ম্যালথাস তাঁর তত্ত্বে আত্মসংযম, চিরকৌমার্য, বিলম্বে বিয়ে, যৌন নৈতিকতার কথা জোর দিয়ে বলেছেন যা একেবারেই অসম্ভব। বর্তমানকালে গর্ভনিরোধক প্রযুক্তি ও জন্মনিয়ন্ত্রন সামগ্রী জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধে সক্ষম হওয়ায় ম্যালথাসের ধারণা ভুল প্রমানিত হয়েছে। ম্যালথাসের তত্ত্বে কেবল তৎকালীন বিষয়বস্তুরই আভাস পাওয়া যায়। তিনি ভুলে গিয়েছিলেন যে সময় বদলায়  এবং তার সাথে জীবনের চাহিদাও সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তন আসে। সময়ের সাথে খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থাও পাল্টাতে পারে। 

Leave a Comment