ফ্লুইড-মোজাইক মডেল (Fluid-mosaic model)


Fluid Mosaic Model Of Cell Membrane


বিভিন্ন মডেলের মধ্যে সবচেয়ে গ্রহণীয় মডেল হলো ফ্লুইড-মোজাইক মডেল (S.J. Singer and G.L. Nicolson 1972)। প্লাজমামেমব্রেন এর গঠন সংক্রান্ত ব্যাখ্যাদান প্রসঙ্গে ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে এস. জে. সিঙ্গার এবং জি. এল, নিকলসন কর্তৃক প্রবর্তিত মডেলকে ফ্লুইড-মোজাইক মডেল বলে। এ মডেল অনুযায়ী কোষঝিল্লি দ্বিস্তরবিশিষ্ট। প্রতিটি কা ফসফোলিপিড দিয়ে গঠিত (চিত্র ১.৬)। উভয় স্তরের হাইড্রোকার্বন লেজটি সামনাসামনি (মুখোমুখী) থাকে এবং পানিগ্রাহী (hydrophillic) মেরু অংশ বিপরীত দিকে থাকে। ঝিল্লির প্রোটিন অণুগুলো ফসফোলিপিড স্তরে এখানে সেখানে বিক্ষিপ্তাবস্থায় থাকে। কার্বোহাইড্রেট এবং অন্যান্য উপাদানও ফসফোলিপিড মাধ্যমে এখানে সেখানে মিশে থাকতে পারে। লিপিড অণুর মধ্যে প্রোটিনের এরূপ বিন্যাসকে সিঙ্গার ও নিকলসন সমুদ্রতলে ভাসমান হিমশৈল (Iceberg) এর সয়া তুলনা করেছেন। সদৃশগত কারণে এ মডেলকে আইসবার্গ মডেলও বলা হয়।


ফ্লুইড-মোজাইক মডেল অনুযায়ী কোষঝিল্লির গাঠনিক উপাদান নিম্নরূপ:


(ক) ফসফোলিপিড বাইলেয়ার: এটি দুই স্তরবিশিষ্ট এবং ফসফোলিপিড (অণু) দিয়ে তৈরি। প্রতিটি ফসফোলিপিতে এক অণু গ্লিসারল থাকে এবং গ্লিসারলের সাথে দুটি ননপোলার ফ্যাটি অ্যাসিড লেজ এবং একটি পোলার ফসফেট হেড থাকে। ফসফেট হেড ও ফ্যাটি অ্যাসিড লেজের মাঝে গ্লিসারল থাকে।

(খ) মেমব্রেন প্রোটিন: কোষঝিল্লিতে তিন ধরনের প্রোটিন শনাক্ত করা হয়েছে। যেমন: (i) ইনটিগ্রাল প্রোটিন- এগুলো ঝিল্লির উভয় সার্ফেস পর্যন্ত ব্যাপ্ত থাকে। (ii) পেরিফেরাল প্রোটিন-এগুলো ঝিল্লির সার্ফেসে থাকে এবং (iii) লিপিড সম্পৃক্ত প্রোটিন-এগুলো লিপিড কোর-এ সম্পৃক্ত থাকে।

 (গ) গ্লাইকোক্যালিক্স: এটি ঝিল্লির ওপর একটি চিনির স্তর বিশেষ। ফসফোলিপিড অণুর সঙ্গে কার্বোহাইড্রেট শৃঙ্খল যুক্ত হয়ে গ্লাইকোলিপিড ও প্রোটিন অণুর সাথে কার্বোহাইড্রেট শৃঙ্খল যুক্ত হয়ে গ্লাইকোপ্রোটিন গঠন করে। গ্লাইকোপ্রোটিন এবং গ্রাইকোলিপিডকে মিলিতভাবে গ্লাইকোক্যালিক্স বলা হয়। কার্বোহাইড্রেট শৃঙ্খলগুলো সবসময় ঝিল্লির বহিঃস্তরে অবস্থান করে।

( ঘ) কোলেস্টেরল: এটি লিপিড জাতীয় পদার্থ। ফসফোলিপিড অণুর ফাঁকে ফাঁকে এগুলো অবস্থান করে। প্রাণি কোষের ঝিল্লিতে এটি অপেক্ষাকৃত বেশি থাকে। সেল সার্ফেস (cell surfaces)-এ ভেদ্যতা (permeability) ও এনজাইমের কার্যকারিতা পরিবর্তনশীল হতে দেখা যায়। এতে বোঝা যায়, সার্ফেস এলাকা এবং এর উপাদান উভয়ই পরিবর্তনযোগ্য ফ্লুইড-মোজাইক মডেল অনুযায়ী এসব পরিবর্তনশীলতা ঘটা সম্ভব। এ মডেল অনুযায়ী প্রোটিন এবং গঠন উপাদানসমূহকে স্থির (fixed) ধরা হয় না, বরং মনে করা হয় এরা ফসফোলিপিডে ভেসে থাকে। ফলে বস্তুর একটি মোজাইক তৈরি হয়। প্রোটিনসমূহ আংশিক পানিগ্রাহী (hydrophilic-যখন ঝিল্লির সার্ফেস-এ থাকে) এবং আংশিক পানিরোধী (hydrophobic- যখন লিপিডের সাথে মিশ্রিত অবস্থায় মাঝের দিকে থাকে) হতে পারে। এ মডেল কোষঝিল্লির কার্বোহাইড্রেট এবং প্রোটিন হতে উৎপন্ন অন্যান্য দ্রব্যাদির (protein derivatives) উপস্থিতি সমর্থন করে। কতিপয় বস্তু কোষের ভেতর হতে বাইরে বের করতে এবং বাইর হতে ভেতরে প্রবেশ করাতে কোষঝিল্লির কার্বোহাইড্রেটের উপস্থিতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করা হয়। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে (কোষঝিল্লিটি অনেকটা তরল পদার্থের ন্যায় আচরণ করে। লিপিড অণু তরল পদার্থের ন্যায় ঝিল্লির একই স্তরে স্থান পরিবর্তন করে, পাশে ব্যাপ্ত (diffuse) হয় এবং অক্ষের (long axis) বরাবর ঘুরতে (rotate) পারে। একে flip-flop movement) বলে। এ । তথ্যগুলো ফ্লুইড-মোজাইক মডেলকে বিশেষভাবে সমর্থন করে।

 কোষঝিল্লির রাসায়নিক উপাদান: (i) কোষঝিল্লিতে থাকে প্রোটিন, লিপিড এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে পলিস্যাকারাইড (polysaccharides)। (ii) প্রোটিন গাঠনিক উপাদান হিসেবে, (structural), এনজাইম হিসেবে (enzymes) এবং বাহক প্রেটিন (carrier protein) হিসেবে থাকে। এদের গঠন ও পরিমাণগত পার্থক্য থাকতে পারে। (iii) কোষঝিল্লির মোট শুষ্ক ওজনের প্রায় ৭৫ ভাগই লিপিড। লিপিড প্রধানত ফসফোলিপিড (phospholipids) হিসেবে থাকে। ইতোমধ্যেই 'পাঁচ রকম ফসফোলিপিড শনাক্ত করা হয়েছে-যার সবচেয়ে সরলটি হলো ফসফোটাইডিক অ্যাসিড

Leave a Comment