বিভিন্ন ধরনের প্রজাতি শ্রেণিবিন্যাস কর


বিভিন্ন প্রকার প্রজাতি


 প্রজাতি (Species) হচ্ছে জীবের একটি প্রকার (a kind)। এটি শ্রেণিবিন্যাসের সর্বনিম্ন ধাপ বা category। প্রজাতিকে শ্রেণিবিন্যাসের একক (a unit of classification) বলা হয়। জন রে (John Ray) ১৬৮৬ সালে 'Species' শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন। তবে Species এর নাম 'eidos' ব্যবহার করেছিলেন Plato এবং Aristotle (প্রজাতির সংজ্ঞা নিরূপণ করা খুবই কঠিন। সে কারণে


বিভিন্ন জীববিজ্ঞানী বা শ্রেণিতত্ত্ববিদ প্রজাতিকে নানাভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। নিচে প্রজাতির কয়েকটি সংজ্ঞা উল্লেখ করা হলো: ক্যারোলাস লিনিয়াস (Carolus Linnaeus) ও তাঁর সমকালীন বিজ্ঞানীরা মনে করেন প্রজাতি হচ্ছে এক অপরিবর্তনীয় সত্ত্বা যা ঈশ্বর


সৃষ্ট একটি জীবগোষ্ঠী, যারা অপর কোনো জীবগোষ্ঠী থেকে স্পষ্টত পৃথক এবং যাদের প্রজন্ম পূর্বপুরুষের অবিকল বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। 

□ আর্নেস্ট মায়ার (E. Mayer) ১৯৪২ সালে প্রজাতির সংজ্ঞায় বলেন, প্রজাতি হলো এমন কতকগুলো জীবের সমষ্টি যারা


নিজেদের মধ্যে জননক্রিয়া সম্পাদনে এবং জননক্ষম সন্তান উৎপাদনে সক্ষম কিন্তু প্রায় একই রকম অথবা ভিন্ন আঙ্গিক লক্ষণ বিশিষ্ট


অন্যান্য জীব থেকে জননসূত্রে পৃথক বা বিচ্ছিন্ন। এই সংজ্ঞা থেকে প্রজাতির সংজ্ঞা আধুনিক ও সর্বজনস্বীকৃত। অতএব উপরিউক্ত সংজ্ঞাসমূহের পর্যালোচনা করলে প্রজাতির প্রকৃতি সম্পর্কে যা বুঝা যায় তা হলো:

 (ক) প্রজাতি হচ্ছে সুস্পষ্ট সাদৃশ্যমূলক বৈশিষ্ট্যসহ একটি একক জনগোষ্ঠী (A unit of population);

 (খ) প্রজননিক দিক থেকে অন্য কোনো গোষ্ঠী থেকে পৃথক অর্থাৎ জিনভাণ্ডার (gene pool) পৃথক হবে;

(গ) দুটি ভিন্ন প্রজাতির মধ্যপর্যায়ের কোনো গোষ্ঠী থাকবে না এবং (ঘ) সাধারণত বাস্তুসংস্থানিক দিক থেকে এক প্রজাতি অন্য প্রজাতি থেকে পৃথক থাকবে।

বিভিন্ন প্রকার প্রজাতির বর্ণনা নিম্নে দেওয়া হলো।

১. সিবলিং প্রজাতি (Sibling species): আঙ্গিক গঠন এক কিন্তু উর্বর সন্তান জন্ম দেয় না অর্থাৎ জননসুত্রে পৃথক। ২. সিমপ্যাট্রিক প্রজাতি (Sympatric species): গঠনগত একই প্রকার এবং একই ভৌগোলিক অঞ্চলের প্রজননিক দিক থেকে পৃথক জীবগোষ্ঠী।


৩. অ্যালোপ্যাট্রিক (Allopatric species): গঠনগত দিক থেকে ভিন্ন তবে একই ভৌগোলিক অঞ্চলে বসবাসরত গোষ্ঠী।


৪. মহাদেশীয় প্রজাতি (Continental species): বৃহৎ ভৌগোলিক অঞ্চলে এবং ব্যাপকভাবে বিস্তৃত গোষ্ঠী। ৫. দ্বীপবাসী প্রজাতি (Insular species): শুধু দ্বীপেই সীমাবদ্ধ গোষ্ঠী।


৬. সর্বব্যাপী প্রজাতি (Cosmopolitan species): পৃথিবীর সর্বত্র বিস্তৃত একটি গোষ্ঠী।


৭. ট্রপিকোপলিট্যান বা প্যানট্রপিক্যাল প্রজাতি (Tropicopolitan or pantropical species): গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে বাসকারী একটি গোষ্ঠী।


৮. মনটেন প্রজাতি (Montane species): পাহাড়ি সুউচ্চ স্থানে বাসকারী গোষ্ঠী।

 ৯.মরফোজিওগ্রাফিক্যালপ্রজাতি(Morphogeographical species): সকল প্রজাতি যারা অঙ্গসংস্থানিক এবং ভৌগোলিক অঞ্চলভিত্তিক গোষ্ঠীতে অন্তর্ভুক্ত হবে। 

১০. অঙ্গসংস্থানিক প্রজাতি (Morpho species): যে সকল প্রজাতির অঙ্গসংস্থানিক বা আকারগত বৈশিষ্ট্য প্রাধান্য পায় তাদের অঙ্গসংস্থানিক প্রজাতি বলে।

১১. অ্যাগামো প্রজাতি (Agamo species): যেসব প্রাণিগোষ্ঠী বা প্রজাতিগোষ্ঠী শুধু পার্থেনোজেনেসিস, অঙ্গজ বা অযৌন জনন দ্বারা বংশবৃদ্ধি করে তাদের অ্যাগামো প্রজাতি বলে।

১২. প্যানমিকটিক প্রজাতি (Panmictic species): উভয় লিঙ্গ বা একলিঙ্গিক জীব দ্বারা সৃষ্ট গোষ্ঠী।

১৩. অ্যাপোমিকটিক প্রজাতি (Apomicflic species): একলিঙ্গিক গোষ্ঠী তবে কার্যকর যৌনদশা অনুপস্থিত। এদের কেউ ডিম্বাণু উৎপন্ন করে আর অন্যরা মুকুলোদগম (Budding ) বা বিভাজন (Fission) এর মাধ্যমে প্রজনন সম্পন্ন করে।

১৪. পলিটাইপিক প্রজাতি (Polytypic species): একাধিক উপপ্রজাতি (Sub-species) সমন্বয়ে গঠিত গোষ্ঠী।

১৫. মনোটাইপিক প্রজাতি (Monotypic species): উপপ্রজাতি বিহীন গোষ্ঠী।

১৬. প্রত্নতাত্ত্বিক প্রজাতি (Palaeontolagical species): জীবাশ্মগত প্রজাতি।

Leave a Comment