বন্যপ্রানি সংরক্ষনে কোন কোন আন্তর্জাতিক সংস্থা গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা পালন করে থাকে?
বন্যপ্রানি সংরক্ষণে যেসব আন্তর্জাতিক সংস্থা ভূমিকা পালন করে থাকে নিচে তা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
(i) IUCN-International Union for Conservation of Nature and Natural Resources
(ii) WWF- World Wildlife Fund
(iii) WCMC-World Conservation Monitoring Centre.
(iv) UNICEF-United Nations International Children Emergency Fund.
(v) EAS-Environmental Awareness Strategies.
(vi) CITES-Convention on International Trade in Endangere Species of Wild Fauna and Flora.
(i) IUCN: IUCN-এর পূর্ণনাম হলো- International Union for Conservation of Nature and Natural Resources. 4 সংগঠনটি ১৯৪৮ সালের ৫ অক্টোবর উদ্ভিদ সম্প্রদায় ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ এবং বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করার মহান ব্রত নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটা একটা আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা UNESCO এবং ফ্রান্স সরকারের যৌথ উদ্যোগে IUCN গঠিত হয়। এর প্রধান দপ্তর সুইজারল্যান্ডে অবস্থিত। এতে ১২০টি দেশের ৬৫০টি সদস্য নিয়ে গঠিত। এর ৬টি কমিশন রয়েছে। এর প্রায় সাত মিলিয়ন মার্কিন ডলার রয়েছে। এ অর্থের সিংহভাগ দেয় WWF (World Wild life Fund) থেকে আর বাকি অংশ দেয় সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে। বিজ্ঞানসম্মতভাবে প্রাকৃতিক সম্পদ বিশেষ করে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বনাঞ্চল সংরক্ষণ করাই IUCN-এর প্রধান উদ্দেশ্য।
IUCN ছয়টি কমিশন নিয়ে গঠিত
১. SSC (Survival Service Commission)
২. জাতীয় পার্ক এবং সংরক্ষিত এলাকা সংক্রান্ত কমিশন।
৩. পরিবেশ বিজ্ঞান বিষয়ক কমিটি।
৪. পরিবেশ পরিকল্পনা সংক্রান্ত কমিশন।
৫. শিক্ষা সংক্রান্ত কমিশন।
৬. পরিবেশ সম্পর্কিত নীতিমালা, আইন এবং প্রশাসন সংক্রান্ত কমিশন।
IUCN-এর প্রধান প্রধান প্রোগ্রাম:
(1) প্রাকৃতিক সম্পদের বিজ্ঞানসম্মত ব্যবহার।
(ii) আইন প্রণয়ন ও নতুন কৌশল উদ্ভাবন।
(iii) শক্তির লাকসই ব্যবহার।
(iv) কী স্টোন প্রজাতি ও সংকটাপন্ন প্রজাতি বাঁচিয়ে রাখা।
(v) সবুজবিপ্লব বা Green economy |
(ii) WWF: WWF-এর পূর্ণনাম হলো- World Wildlife Fund এটা বিশ্বের প্রকৃতি সংরক্ষণের একটি বৃহৎ স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান। UNESCO-এ প্রচেষ্টা ও সহযোগিতায় ১৯৫১ সালে WWF প্রতিষ্ঠিত হয়। এর প্রধান কার্যালয় সুইজারল্যান্ডের গ্লান্ডে অবস্থিত। WWF-এর পলিসি এবং নীতিগুলো তিন বছর পরপর নির্বাচিত কমিটি দ্বারা নির্ধারিত হয়। প্রকৃতিকে সংরক্ষণ করা, বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে জীবনের প্রয়োজনীয়তা মিটিয়ে একটি স্বাস্থ্যসম্মত বাস্তুতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা এর লক্ষ্য। প্রাকৃতিক সম্পদ যথা: উদ্ভিদ, প্রাণী, মাটি, প্রাকৃতিক দৃশ্য, পানি সম্পদ ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ করা WWF-এর কাজ। এসব প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের জন্য তহবিল সংগ্রহ এবং বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ ও গবেষণার সাথে এই প্রতিষ্ঠানটি জড়িত। IUCN কর্তৃক নির্ধারিত প্রকল্পগুলোতেই এ প্রতিষ্ঠান অর্থ প্রদান করে। এছাড়া IUCN, UNDP ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের সাথে যৌথভাবে এ প্রতিষ্ঠান বিভিন্নভাবে সংরক্ষণমূলক প্রকল্পের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
(iii) WCMC: WCMC-এর পূর্ণনাম হলো- World Conservation Monitoring Centre. WWF, UNEP এবং Environmental Law center এর সহযোগিতায় ডাটাবেসগুলো তৈরি ও ব্যবস্থাপনার কাজকে সামনে রেখে ১৯৮১ সালে এই প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠিত হয়। যুক্তরাজ্যের (UK) ক্যামব্রিজে এর প্রধান কার্যালয় অবস্থিত। এখানে ১৬,০০০-এর অধিক সংরক্ষিত এলাকা সংরক্ষণ গুরুত্বপূর্ণ ৮০,০০০-এর অধিক উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতির তথ্যাদিসহ সংরক্ষণ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য এই কেন্দ্রের ডাটাবেস রয়েছে। এ সংস্থার ম্যাপ ডিজিটাইজড ডাটায় পাওয়া যায়। WCMC জীব বৈচিত্র্য সম্পর্কিত জৈবনিক তথ্যাদি এর মধ্যে উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতির বিস্তার, ইকোলজি, প্রজাতির বর্তমান অবস্থা, পপুলেশনের আকার, পটেনশিয়ালিটি বা এর প্রকৃতি ভীতি ও আবাদে এদের অবস্থান লিপিবদ্ধ করা হয়। উচ্চ জীববৈচিত্র্য সম্পূর্ণ স্থানগুলো, সংরক্ষিত এলাকাগুলোর অবস্থান ও এদের গুরুত্বগুলো এতে লিপিবদ্ধ রয়েছে।
(W) UNICEF: UNICFE-এর পূর্ণনাম হলো- "United Nations International Children Emergency Fund" | ১৯৪৬ সালে তহবিল গঠিত হলেও সত্তর এর দশকে বিশ্ব পরিবেশ সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে এ সংস্থা গঠিত হয়। বর্তমান নাম United Notions Children Fund অর্থাৎ জাতিসংঘ শিশু তহবিল। এর প্রধান কার্যালয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে অবস্থিত। বর্তমানে এর সদস্য সংখ্যা ১৯২টি। সারা বিশ্বের অবহেলিত, সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত, পুষ্টিহীন, শিক্ষাহীন শিশুদের সার্বিক উন্নয়ন করা এই সংস্থার কাজ। মানব সম্পদ উন্নয়নের ক্ষেত্রে শিশুদের অগ্রাধিকার সর্বাগ্রে। জীবজগতের ভারসাম্য রক্ষার তহবিল গঠন করে পরিবেশ সংরক্ষণ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।
(v) EAS: EAS-এর পূর্ণনাম হলো- Environmental Awareness Strategies, জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ সংরক্ষণ সংক্রান্ত বাস্তুতন্ত্রের গতিশীলতা, স্থায়িত্ব ও পুষ্টির অস্তিত্বের জন্য বাস্তুতন্ত্রের মধ্যে জীববৈচিত্র্যের প্রাকৃতিক পরিবেশ কাঠামো সংরক্ষণ প্রয়োজন। কেননা প্রতিটি জীব খাদ্য, বাসস্থান, জৈবিক কার্য, বিনোদন ইত্যাদির জন্য একে অপরের উপর নির্ভরশীল। বাস্তুতন্ত্রের জীববৈচিত্র্য তথ্য জীবের সংখ্যা ও প্রকারভেদ যত বেশি বাস্তুতন্ত্রের স্থায়িত্ব তত বেশি হবে। কম সংখ্যক জীব সম্পন্ন এবং একরূণ তথা সরলীকৃত বাস্তুতন্ত্রের স্থায়িত্ব খুবই অল্প। কোনো বাস্তুতন্ত্র থেকে কোনো একটি প্রজাতির বিলুপ্তি ঘটলে ঐ বাস্তুতন্ত্র সরলীকৃত হবে ও অবিষ্যতে বিপন্ন হবার সম্ভাবনাই বেশি থাকে। তাই বাস্তুতন্ত্র বিপন্ন হলে মানব প্রজাতিও বিপন্ন হবে। বর্তমানে বন্যজীব তথা
এখবৈচিত্র্যের অস্তিত্বও নিরাপদ নয়। তাই মানব জাতির দীর্ঘস্থায়ী অস্তিত্বের জন্য পৃথিবীর জীবন পরিবেশেও হাবিবু নদ এরক্ষণ খুবই জরুরি ব্যাপার হয়েছে। সেজন্যই পরিবেশ সংরক্ষণ সম্পর্কে সচেতন করে যোগ্য যারপ্যাক। এ গচেতনতা সৃষ্টি ২টি উপায়ে অর্জন করা যেতে পারে। যথা-
১. প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী শিক্ষার মাধ্যমে সচেতনতাও ২. অপ্রচলিত প্রথা অনুযায়ী শিক্ষার মাধ্যমে সচেতনতা।
১. প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী শিক্ষার মাধ্যমে সচেতনতা- সংরক্ষণ সচেতনতা সৃষ্টি করতে দেশের প্রচলিত ও প্রথাগত বিল পদ্ধতিগুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেমন-দেশের সকল পর্যায়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আদের পাঠ্যসূচীতে পরিবেগের শিক্ষার কা ধরিবেশ বিজ্ঞান বাধ্যতামূলক করা হলে ছাত্র ছাত্রীদেরকে পরিবেশ ও সংরক্ষণ এবং জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে অনায়াসে সরেন আর বার।
২. অপ্রচলিত প্রথা অনুযায়ী বিস্তার মাধ্যমে সচেতনতা-
সমাজে শিশু, কিশোর, প্রাপ্তবয়স্থ, পরি প্রশাসক, রাজনীতিবিদ, চিকিৎসক, কৃষিবিদ ইত্যাদিসহ সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে গণমাধ্যম, সংবাদপত্র, বেয়ায় ইতি, পর-পত্রিকা ও গময়িকী, পরিবেশ সংরক্ষণ ও জীববৈচিত্র্যের রক্ষায় সচেতনতা সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
(vi) CITES: CITES-এর পূর্ণনাম হলো- Convention on International Trade in Endangere Species of Wild Fauna and Flora. বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের বিপন্ন বন্যপ্রজাতি সংরক্ষণের জন্য বন্য উদ্ভিদ ও প্রাণীকূলের বিপন্ন প্রজাতির আন্তর্জাতিক বণিজ্যের উপর অনুষ্ঠিত সম্মেলনেই এই প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। ১৯৭৩ সালে পৃথিবীও ৮০টি দেশের প্রতিনিধিরা এর সঙ্গে স্বাক্ষর প্রদান করেন। ১৯৭৫ সালে এ সংস্থার কার্যক্রম শুরু হয়। বাংলাদেশ ও ভারতসহ বিশ্বের অনেক রাষ্ট্র এই সংস্থার সিদ্ধায়কে গ্রহণ হয়ে স্বাক্ষর করেছেন। বর্তমানে এর সদস্য সংখ্যা-১৮৩। এর প্রধান ভার্যালয় সুইজারল্যান্ডের লটসান এ অবস্থিত। বিলুল্লার বা বিপজ্জনক উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতিগুলোর চামড়া, পশম ও অন্যান্য প্রাণীজাত দ্রব্যের আন্তর্জাতিক বাণিজেলার বিধি-নিষেধ আরোপের নীতি নির্দেশনা করা এর কাজ। এতে বিশ্বের মোট ৪,০৬৫টি প্রজাতির বন্যপ্রাণী ও ১৬৬ টি উদ্ভিদ প্রজাতির বণিজ্যিক মানাস-প্রদান নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বিশেষ করে বিলুপ্ত প্রায় অর্কিডের বাণিজ্যের উপরও বিধি-নিষেধ আরোপের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ২,৫০০ প্রজাতির প্রাণী ও ২৫,০০০ উদ্ভিদ প্রজতির ব্যবসায়িক আদান-প্রদানের তথ্যাদিও মনিটর করে খাজে। জীবিত জীনের স্থানান্তরের ক্ষেত্রেও এই সংস্থা ব্যবসায়ের উন্নয়ন করে। ব্যবসায় পরিচালনার জন্য রক্ষণশীলতাকে CITES এর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ হয়। এই সংস্থার মাধ্যমে অবৈধভাবে যাতে ব্যবসা চালাতে না পারে, তার ব্যবস্থা নেয়া হয়।।
Leave a Comment