পাখনা কি? মাছের বিভিন্ন প্রকার পুচ্ছ পাখনা সম্পর্কে জেনে নিন।
পাখনা: মাছের জলজ জীবনে অভিযোজনের ক্ষেত্রে দেহত্বকের ভাঁজ বা ত্বকের ঝিল্লিময় অংশ প্রলম্বিত হয়ে যে উপাঙ্গের সৃষ্টি হয় তাকে পাখনা বলে।
পুচ্ছ পাখনা: মাছের দেহে বিদ্যমান পাখনাসমূহের মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে পুচ্ছ পাখনাকে বিবেচনা করা হয়। কারণ-পানিতে মাছের দিক পরিবর্তনসহ সন্তরণে পুচ্ছ পাখনা প্রধান ভূমিকা পালন করে। Hippocampus বা সামুদ্রিক ঘোড়া এবং Eel বা বাইন মাছ ব্যতীত প্রায় প্রতিটি মাছের পুচ্ছ পাখনা সুগঠিত হয়ে থাকে।
গঠন: মাছের দেহের পশ্চাৎ প্রান্তে অবস্থিত লেজের অগ্রভাগ প্রশস্ত হয়ে পুচ্ছ পাখনা গঠন করে। দণ্ডাকৃতির রেডিয়ালস্ এবং টেরিজিওফোর (Pterygiophore) সহ শৃঙ্গায়িত তন্তুর সমন্বয়ে পুচ্ছ পাখনার অন্তঃকঙ্কাল গঠিত হয়। মেরুদণ্ডের পশ্চাৎ প্রান্তীয় কশেরুকাগুলো রূপান্তরিত হয়ে পুচ্ছ পাখনা রশ্মিগুলোকে অক্ষীয় কংকালের সাথে যুক্ত রাখে। নিউরাল স্পাইন এবং হিমাল স্পাইন উপস্থিত থাকায় পুচ্ছ পাখনা দৃঢ়তা লাভ করে।
পুচ্ছ পাখনার প্রকারভেদ: আকার ও গঠনের উপর ভিত্তি করে মাছের পুচ্ছ পাখনাকে ৬ ভাগে ভাগ করা হয়। এরা হলো-
১) প্রোটোসার্কাল পুচ্ছ পাখনা: বাহ্যিক এবং অভ্যন্তরীণভাবে প্রতিসম, আদিম প্রকৃতির পুচ্ছ পাখনাকে প্রোটোসার্কাল পুচ্ছ পাখনা বলে। এক্ষেত্রে মেরুদন্ডের শেষাংশ লেজের পশ্চাৎপ্রান্ত পর্যন্ত প্রসারিত থাকে।
চিত্র: প্রোটোসার্কাল পুচ্ছ পাখনা
প্রোটোসার্কল পুচ্ছ পাখনার উপরের অংশ অর্থাৎ এপিকর্ডাল লোব এএবং নিচের অংশ অর্থাৎ হাইপোকর্ডল লোব পরস্পর সমান থাকে। এক্ষেত্রে এপিকর্ডল এবং হাইপোকর্ডাল লোব সমভাবে বৃদ্ধি লাভ করে। সব মাছের জণীয় পরিস্ফুটনকালীন সময়ে এ ধরনের পুচ্ছ পাখনা দেখা যায়।
(২) ডাইফিসার্কাল পুচ্ছ পাখনা: এ ধরনের পুচ্ছ পাখনা দেখাতে অনেকটা প্রোটোসার্কাল পুচ্ছ পাখনার মতো। তবে এক্ষেত্রে মেরুদন্ডের শেষপ্রান্ড লেজের শেষসীমা পর্যন্ত পৌছায় না। Polypterus নামক ফুসফুসীয় মাছ এবং Latimeria মাছের পুচ্ছ পাখনা ডাইফিসার্কাল প্রকৃতির। অনেকে এ ধরনের পুচ্ছ পাখনাকে প্রোটোসার্কাল পুচ্ছ পাখনার ক্রম রূপান্তর বলে মনে করেন।
চিত্র: ডাইফিসার্কাল পুচ্ছপাখনা
(৩) হেটেরোসার্কাল পুচ্ছ পাখনা : এ ধরনের পুচ্ছ পাখনায় মেরুদন্ডের শেষাংশ বাঁকানো অবস্থায় ঊর্ধ্বমুখী হয়ে লেজের প্রায় শেষসীমা পর্যন্ত পৌছায়। এর ফলে সমগ্র পুচ্ছ পাখনাটি দুটি অসম খণ্ডে বিভক্ত হয়ে পড়ে
চিত্র: হেটেরোসার্কাল পুচ্ছ পাখনা
উপরের এপিকর্ডাল লোব লম্বা ও সরু হয় এবং নিচের হাইপোকর্ডাল লোব প্রশস্ত এবং খর্বাকার হয়। হেটেরোসার্কাল পুচ্ছ পাখনা বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণভাবে। অপ্রতিসম হয়ে থাকে। বিলুপ্ত প্ল্যাকোডার্ম মাছসহ সব তরুণাস্থি মাছে এ ধরনের পুচ্ছ পাখনা বিদ্যমান। কঠিনাস্থি মাছের মধ্যে Acipenser এবং Polyodon মাছের পুচ্ছ পাখনা কেউ গ্লাসার্কাল প্রকৃতির।
৪) হাইপোসার্কাল পুচ্ছ পাখনা: আকৃতিগতভাবে এ ধরনের পুচ্ছ পাখনা হেটেরোসাকাল পুচ্ছ পাখনার সম্পম্পূর্ণ দিপাঠায়। এক্ষেত্রে মেরুদন্ডের শেষাংশ বাঁকানো অবস্থায় নিম্নমুষ্ট হে লেজের শেষগ্রান্ড পর্যন্ত পৌছায়।
डिया Teleosts মাহের হাইপোসাকাল পুাহপাখনা
এর ফলে পুচ্ছ পাখনা দুটি অসম খণ্ডে বিভক্ত হয়। উপরে। এপিফর্মাল লোব প্রশস্ত ও নিচের হাইপোকর্ডলে দোষ যাচ ও লম্বা হর। Exocoetus বা উড়কু মাছে এ ধরনের পপুল পাখনা দেখা যায়।
(৫) জিফাইরোসার্কাল পুচ্ছ পাখনা:এ ধরনের পুচ্ছ পাখনার সাথে পৃষ্ঠ পাখনা এবং পায়ু পাখনা মিলিত হয়ে একটি নিরজর বা অবিচ্ছিন্ন পাখনার সৃষ্টি করে।
পাখনা রশ্মিগুলো শক্ত ও লম্বা হয়ে বাইরে কণ্টকের নায় বর্ধিত হয়। Fieruspis নামক মাছে এ ধরনের পুচ্ছ পাখনা দেখা যায়।
(vi) হোমোসার্কাল পুচ্ছ পাখনা: আধুনিক কঠিনাস্থি যাছে এ ধরনের পুচ্ছ পাখনা দৃশ্যমান হয়। বাহ্যিকভাবে এভিনয় হলেও অভ্যন্তরীণ গঠনের দিক থেকে হোমোসাকাল শুম পাখনা অপ্রতিসম। এক্ষেত্রে মেরুদন্ডের শেষপ্রান্ত লেজের পশ্চাৎগ্রান্ত পর্যন্ত পৌছায় না। মেরুদণ্ডের অগ্রভাগ উপরের দিকে সামান্য বাঁকানো থাকে এবং নিচের হিমাল আর্চ চ্যাপ্টা হয়ে হিপউরাল আর্ট গঠন করে।
চিত্র: হোমোসার্কাল পুচ্ছপাখনা
হোমোসার্কাল পুচ্ছ পাখনার প্রকারভেদ:
পুচ্ছ পাখনা বাহ্যিক আকারের উপর ভিত্তি করে হোমোসার্কাল শুর পাখনাকে প্রধানত ৬ ভাগে ভাগ করা যায়। এরা হলো-
(a) লুনেট: যে হোমোসার্কাল পুচ্ছ পাখনার প্রান্তসীমা অর্ধচন্দ্রাকৃতির হয় তাকে লুনেট বলে। যেমন- Tuna।
চিত্র: বিভিন্ন প্রকার হোমোসাকাল পুচ্ছপাখনা
(b)ফর্কড: যখন পুচ্ছ পাখনার প্রান্তসীমা দ্বিখণ্ডিত হয়ে চিমটার আকার ধারণ করে তখন তাকে ফর্কড বলে।
যেমন- Hilsa |
(c) ইমারজেন্ট: যখন পুচ্ছ পাখনার প্রান্তসীমা দ্বিতীয় বন্ধনীর আকার ধারণ করে তখন সেই হোমোসার্কাল পুচ্ছ পাখনাকে ইমারজেন্ট বলা হয়। যেমন-Labeo
(d) ট্রাঙ্কেটেড: যে হোমোসার্কাল পুচ্ছ পাখনার প্রান্তসীমা ভোঁতা বা প্রায় খাড়া থাকে তাকে ট্রাঙ্কেটেড পুচ্ছ পাখনা বলে। যেমন- Flounder !
(e) রাউন্ডেড: যখন পুচ্ছ পাখনার প্রান্তসীমা প্রায় গোলাকার দেখায় তখন তার নাম হয় রাউন্ডেড।
যেমন- Channa (টাকী বা শোল মাছ)।
(1) পয়েন্টেড: যখন পুচ্ছ পাখনার প্রান্তসীমা বল্লমের ফলার মতো দেখায় তখন তাকে পয়েন্টেড বলা হয়।
যেমন- Gobby।
Leave a Comment