আমাদের দেশের স্বাদু পানি যেমন পুকুর দীঘিতে যেসব রোগে মাছ আক্রান্ত হয়ে থাকে সেসব রোগগুলো হলো:


১/ মাছের ক্ষত রোগ: মাছের ক্ষত রোগ সম্পর্কে মৎস্য চাষিরা কমবেশি সকলেই জানে আবার অনেকে জানে না। এসব রোগ সম্পর্কে ভালোভাবে জানার উপায় আক্রান্ত মাছের ক্ষত রোগ দেখা। এই দাগের আকৃতি ক্রমেই বাড়তে থাকে। এই ক্ষত সাধারণত মাছের লেজের গোড়া, পিঠ ও মুখের দিকেই বেশি হয়ে থাকে।

ক্ষত রোগের প্রতিকার:
১. এসব মাছ দেখামাত্র দ্রুত পুকুর থেকে তুলে ফেলতে হবে।
২. ১০ লিটার পানিতে ১০০ গ্রাম লবণ গুলে লবণমিশ্রিত পানিতে আক্রান্ত মাছ (৫-১০) মিনিট ডুবিয়ে আবার পুকুরে ছেড়ে দিতে হবে।
৩. ক্ষত রোগ আক্রমণের পূর্বেই প্রতি বছর আশ্বিন মাসের শেষে কিংবা কার্তিক মাসের প্রথম দিকে পুকুরে শতাংশ প্রতি ১ কেজি হারে পাথুরে চুন ও ১ কেজি হারে লবণ দিতে হবে। তাহলে আসন্ন শীত মৌসুমে ক্ষত রোগের কবল থেকে মাছ। রক্ষা পাবে।

2/ মাছের পেট ফোলা রোগ: মাছের পেট ফোলা রোগে সাধারণত রুই জাতীয় মাছ, শিং, মাগুর ও পাঙ্গাস মাছ বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। এ রোগে আক্রান্ত মাছের দেহের রং ফ্যাকাশে হয়ে যায়। পেটে পানি জমার কারণে পেট ফুলে থাকে। মাছ ভারসাম্যহীনভাবে চলাফেরা করে। বেশিরভাগ সময় পানির ওপর ভেসে ওঠে এবং খাবার খায়। আক্রান্ত মাছ অতি দ্রুত মারা যেতে পারে।

৩/মাছের পেট ফোলা রোগের প্রতিকার: প্রতিকার হিসেবে প্রতি শতাংশ জলাশয়ে ১ কেজি হারে পাথুরে চুন প্রয়োগ করতে
হবে। এছাড়াও মাছের খাদ্যের সঙ্গে ফিসমিল ব্যবহার করা জরুরি। এছাড়া পুকুরে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদনসহ মাছকে নিয়মিত সুষম খাদ্য প্রদান করতে হবে।
৩/ পাখনা ও লেজ পচা রোগ: মাছের পাখনা ও লেজ পচা রোগে সাধারণত রুই জাতীয় মাছ, শিং, মাগুর ও পাঙ্গাস মাছ বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। এ রোগে আক্রান্ত মাছের প্রাথমিকভাবেই পিঠের পাখনা এবং ক্রমান্বয়ে অন্যান্য পাখনা আক্রান্ত হয়। আবার কখনো কখনো ব্যাকটেরিয়া দ্বারা এ রোগের সংক্রমণ ঘটে থাকে। পানির ক্ষার স্বল্পতা ও pH ঘাটতি দেখা দিলেও এ রোগের উৎপত্তি হতে পারে।

পাখনা ও লেজ পচা রোগের প্রতিকার: এ রোগে আক্রান্ত মাছ পুকুর থেকে তুলে ০.৫ppm পটাশযুক্ত পানিতে আক্রান্ত মাছকে (৩-৫) মিনিট ডুবিয়ে রাখতে হবে। পুকুরে স্বাভাবিকভাবে সার প্রয়োগ বন্ধ রাখতে হবে। এছাড়া রোগ জীবাণু ধ্বংসের পর মজুতকৃত মাছ কমিয়ে ফেলতে হবে। এ অবস্থায় প্রতি শতাংশে ১ কেজি হারে পাথুরে চুন প্রয়োগ করতে হবে।

৪/ মাছের উকুন রোগ: আমাদের দেশের প্রায় মাছেরই উকুন দেখা যায়। এদের মধ্যে রুই মাছ, কখনো কখনো কাতল মাছও উকুন দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকে। গ্রীষ্মকালে এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায়। এ রোগে মাছের সারা দেহে উকুন ছড়িয়ে দেহের রস শোষণ করে মাছকে ক্ষত-বিক্ষত করে দেয়। এতে মাছ মারা যেতে পারে।

প্রতিকার: মাছের উকুন রোগ প্রতিকার করার জন্য শতকরা আড়াই ভাগ লবণ দ্রবণে আক্রান্ত মাছকে ডুবিয়ে রাখতে হবে। এতে করে উকুনগুলো নিস্তেজ হয়ে পড়বে। এমতবস্থায় হাত কিংবা চিমটা দিয়ে উকুনগুলো তুলে ফেলতে হবে।

৫/ পুষ্টির অভাব: অনেক সময় মাছের পুষ্টিজনিত রোগ দেখা যায়। এ রোগে পুকুরে চাষযোগ্য যেকোনো মাছই আক্রান্ত হতে পারে। ভিটামিন A, D এবং K এর অভাবে মাছ অন্ধত্ব এবং হাড় বাঁকা হয়ে থাকে। মাছের খাবারে আমিষের অভাব হলেও এ রোগ-দেখা দিতে পারে। অচিরেই মাছ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে।

প্রতিকার: এসব রোগে আক্রান্ত মাছকে খাবারের সাথে প্রয়োজনীয় মাত্রায় ভিটামিন ও খনিজ লবণ মিশিয়ে খাওয়ানো হলে খুব তাড়াতাড়ি মাছের শারীরিক অবস্থার উন্নতি ঘটে। এছাড়াও মাছের রোগ প্রতিরোধ করার জন্য আমাদের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে মাছ চাষ করে চাষকৃত পুকুরে মাছের রোগ প্রতিরোধ করা অনেকাংশেই সম্ভব।

Leave a Comment