স্বাদু পানিতে বিভিন্ন প্রজাতির ইচা। যেমন- Macrobrachium, rosenbergii, M. rudis, M. mirabilis ইত্যাদি চাষ করাকে স্বাদু পানির ইচা চাষ বলা হয়। এ গলদা ইচার চাষ বেশি হয়ে থাকে। গলদা ইচা স্বাদু পানির মূল্যবান মৎস্য সম্পদ। বাংলাদেশে ইচা চাষের বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। স্বাদু পানিতে ইচা চাষের উল্লেখযোগ্য পদ্ধতিসমূহ নিম্নরূপ-



(ক) এককভাবে পুকুরে ইচা চাষ।

(খ) পুকুরে ইচা ও কার্প জাতীয় মাছের মিশ্র চাষ এবং

(গ) ধানক্ষেতে ইচা চাষ।


(ক) এককভাবে পুকুরে ইচ্য চাষ। পুকুরে ইচা চাষ পদ্ধতির ধাপসমূহ নিম্নরূপ-


১. পুকুর প্রস্তুতি:

(1) স্থান নির্বাচন: ইচা চাষের জন্য বন্যা ও দূষণমুক্ত এলাকা বেচে নিতে হবে। এছাড়াও প্রয়োজনে যেন সহজেই পানি পাওয়া যায় সেদিকেও লক্ষ রাখতে হবে। পুকুরের আয়তন (০.২-০.৬) হেক্টর এবং গভীরতা ১ মিটার হওয়া উচিত। কারণ এ ধরনের পুকুর সহজেই শুকিয়ে তলদেশ দূষণমুক্ত করা যায়, য্য ইচা চাষের উপযোগী।


(II) পুকুরের তলদেশ: পুকুরের তলদেশ সমতল ও কাদাশূন্য হলে ভালো হয়। কারণ কাদায় ভূষিত গ্যাস জন্মে যা ইচার জন্য ক্ষতিকর। 

(iii) পানি সঞ্চালন ব্যবস্থা। খামারের পুকুরে পরিকল্পিত ও নিয়মিত পানি সরবরাহের জন্য সুইচ গেটযুক্ত প্রবেশ পথ রাখা হয়, বাতে অতিরিক্ত পানি বের করে দেওয়া যায়।


২। অবাঞ্ছিত প্রাণীর নিয়ন্ত্রণ: বিভিন্ন সর্বভুক্ত মাছ ইচা পোনা খেয়ে ফেলতে পারে। এজন্য এদের অপসারণের ব্যবস্থা রাখতে হবে। যাতে কোনো প্রকার অবাঞ্ছিত প্রাণী থাকতে পারে না।

৩. মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি: ইচা চাষের ক্ষেত্রে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধির জন্য হেক্টর প্রতি ১ কেজি চুন প্রয়োগ করা হয়। চুন প্রয়োগের (৫-৭) দিন পর প্রাকৃতিক খাদ্যের অবস্থা দেখে আবার বিভিন্ন প্রকার সার প্রয়োগ করা হয়। এজন্য হেক্টর প্রতি (৪৫০-১০০০) কেজি গোবর ও ৫০ কেজি T.SP প্রয়োগ করা হয়।


৪. নার্সারি পুকুরে পোনা মজুত : ভালো উৎপাদনের জন্য সুস্থ ও সবল পোনা মজুত করা আবশ্যক। এজন্য Hatchary বা প্রকৃতি থেকে প্রাপ্ত ইচা লার্ভা সরাসরি Nursery-তে মজুত করা হয়। নার্সারী পুকুরগুলোর গভীরতা (০.৮-১.০০) মি. হয়ে থাকে এবং প্রতি বর্গ মি. (১০০-১৫০) টি পোনা মজুত করা যায় (এখানে (১-১.৫) মাস লালনের পর এদের পালন পুকুরে স্থানান্তর করা হয়।


৫. লালন পুকুরে প্রতিপালন: লালন পুকুরের আয়তন (১-৩) হেক্টর হওয়া ভালো। উন্নত ব্যবস্থাপনায় (৩-৫)cm আফাশের ইচা পোনা প্রতি বর্গমিটারে (৪-৫) টি মজুত করা যায়।


৬. সম্পূরক খাদ্য: এ ধরনের মৎস্য চাষে সম্পূরক খাদ্য খুবই প্রয়োজন। খাদ্য হিসেবে খোলকবিহীন শামুক, ঝিনুক, ছোটো মাছ খৈল, ভূষি প্রদান করা হয়ে থাকে। ইচা প্রথমে উদ্ভিদভোজী হয়ে থাকে। তবে পরিণত অবস্থায় এরা সম্পূরক খাদ্যের ওপর নির্ভরশীল।


৭. রোগ বালাই নিয়ন্ত্রণ: এদের রোগবালাই কম। তবে কখনো কখনো পরজীবী দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকে। এ সময় পুকুরের পানি পরিবর্তন করে রোগ বালাই দমন করা হয়।


৮. আহরণ: ইচার ওজন (৩০-৪০) গ্রাম হলেই এদের আহরণ করা হয়। এজন্য ছোটো ফাঁসের বেড় জাল ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও সম্পূর্ণ পানি নিষ্কাশন করে সব ইচা ধরা যেতে পারে।


(খ) পুকুরে ইচা ও কার্প জাতীয় মাছের মিশ্র চাষ: স্বাদু পানির পুকুরে গলদা ইচা ও কার্প জাতীয় মাছের মিশ্রচাষে নিম্নের পদক্ষেপগুলো নেয়া হয়ে থাকে-


১. পুকুর নির্বাচন: সারাবছর কমপক্ষে (৫-৬) ফুট পানি থাকে এমন পুকুর নির্বাচন করতে হবে। এর আয়তন (২০-১০০) শতাংশের মধ্যে হওয়া বাঞ্ছনীয়। এছাড়া পুকুরে যাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে আলো-বাতাস প্রবেশ করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।


২. পুকুর প্রস্তুতকরণ: পুকুরের পাড় উঁচু করতে হবে যাতে বন্যায় প্লাবিত না হয়। প্রয়োজনে পানি সরবরাহ ও নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে। পুকুরের তলদেশ থেকে আগাছা ও অতিরিক্ত কাদা অপসারণ করতে হবে এবং রাক্ষসে মাছও অপসারণ করতে হবে।


৩. চুল ও সার প্রয়োগ: পুকুরে প্রতি শতাংশ হারে (১-২) কেজি চুন প্রয়োগের (৪-৫) দিন পর জৈব সার হিসেবে ৪ কেজি গোবর বা মুরগির বিষ্ঠা এবং এর ৩ দিনপর ২৫০ গ্রাম ইউরিয়া ও ২৫০ গ্রাম T.S.P প্রয়োগ করা হয়।


৪. সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ: প্রতিদিন চালের গুড়া ও খৈল ১৪২ অনুপাতে পোনার দেহ ওজনের ২-৩ শতাংশ হারে প্রয়োগ করতে হবে।


৫. রোগ বালাই প্রতিরোধ: মাসে অন্তত ১ বার জাল টেনে পোনাগুলোর দৈহিক বৃদ্ধির হারও সুস্থতা পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন। তবে রোগাক্রান্ত মাছের চিকিৎসা করার চাইতে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করা শ্রেয়।


৬. আহরণ: বাজারজাতকরণের আকারে পৌঁছালে ইচা ও বিভিন্ন মাছ আহরণ করে সেখানে সমান সংখ্যক পোনা মজুত করে

Leave a Comment