মধু কী?মৌচাক হতে  মধু প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণ করা হয়?



 মধু: মধু হলুদ বাদামি বর্ণের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মূল্যবান প্রাকৃতিক ঘন তরল পদার্থ। মৌমাছি কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন প্রকার ফুলের রস মৌমাছির লালা নিঃসৃত বিভিন্ন এনজাইম, জীবাণুনাশক, বিভিন্ন ধরনের পদার্থের মিশ্রণে উৎপন্ন ঘন তরল পদার্থকে মধু বলে।
এ মধু প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণ: আধুনিক ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে নিষ্কাশিত মধু বিশুদ্ধ হয়। দেশীয় পদ্ধতিতে তৈরি মধু বিশুদ্ধ হয় না। এতে ময়লা, মোমের অংশ ও লার্ভার দেহাংশ লেগে থাকতে পারে। ফলে এই মধুর গুণগত মান কম হয়। এছাড়া মৌমাছি যখন প্রচুর পরিমাণে ফুল পায় না তখন যেকোনো ফুল থেকে মৌ-রস সংগ্রহ করে থাকে ফলে যে মধু তৈরি হয় তার গুণগত মান ও পুষ্টি কমে যায়। তাই মধু প্রক্রিয়াজাতকরণে চারণভূমি ও যথার্থ ব্যবস্থাপনা করতে হবে। মধু প্রক্রিয়াজাতকরণ ও মধু সংগ্রহের সময় মধু নিষ্কাশন যন্ত্র পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। পরিষ্কার করে শুকিয়ে মধু নিষ্কাশন করতে হবে।

মধু নিষ্কাশন: একটি জালের তৈরি খাঁচাকে ১টি ড্রামের মধ্যে বসানো হয়। জালক খাঁচার কেন্দ্রস্থলে একটি দণ্ড থাকে। খাঁচার ভেতর ১ সে.মি. পুরু একটি লোহার পাত থাকে। এ পাতের রন্ধ্র দিয়ে মূল কেন্দ্রীয় দণ্ডটি বসানো থাকে। দণ্ডটির উপর ১টি ঢাকা লাগানো থাকে। এ চাকার পাশের দিকে অন্য আর একটি চাকার ভেতর দিয়ে একটি হাতল যুক্ত থাকে। ফলে হাতলটিকে ঘুরালে দণ্ডটি সমাপ্ত তারের খাঁচাসহ ঘুরতে থাকে। দণ্ডটি ঘোরানোর জন্য একটি ড্রামের সাথে বল বিয়ারিং যুক্ত থাকে। সম্পূর্ণ ড্রামটির ব্যাস ৩০ সে.মি. এবং উচ্চতা প্রায় ৪৩ সে.মি.। ড্রামটির তলদেশের কেন্দ্রস্থলে একটি পানির কল বসানো থাকে।


বাক্সের উপরের মধুর প্রকোষ্ঠ হতে কাঠের ফ্রেমগুলো প্রথমে হালকা ও আলতোভাবে ব্রাশ করে কর্মী মৌমাছিদের সরানো হয়। এরপর একটি ধারালো ছুরি দিয়ে মধু প্রকোষ্ঠের উপরে পাতলা মোমসমূহ পরিষ্কার করে নিতে হবে। ড্রামের মধ্যে একসাথে চারটি ক্রেমকে স্থাপন করা যায়। এরপর বিয়ারিং যুক্ত হাতলটি ধীর গতিতে ঘোরানো হয়। সমগ্র খাঁচাটি ফ্রেম চারটিসহ ঘুরতে থাকে। কেন্দ্রাবিমুখী বলের কারণে চাক হতে মধু নিচে পড়তে থাকে।
এরপর জমাকৃত মধু ট্যাপের মাধ্যমে বাইরের পাত্রে সংগ্রহ করা হয়। এভাবে বিশুদ্ধ মধু সংগ্রহ করা হয়।

মধু সংরক্ষণ: মধু সংগ্রহের পর সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা দরকার। মধু নিষ্কাশনের সময় অবশ্যই মধু কাচের পাত্রে সংগ্রহ। করতে হবে। তাহলে বিশুদ্ধ মধু পাওয়া যায় এতে মধুও ভালো থাকে। মধু নিষ্কাশনের পর অনেক সময় মধুতে বিভিন্ন ধরনের ছত্রাক। জন্য নিতে পারে তখন একটি পাত্রে পানি রেখে 50° C তাপমাত্রা গরম করে ঐ পাত্রের উপর মধুপাত্র রেখে উত্তপ্ত করতে হবে।। এরপর ঠান্ডা হলে কাচের বোতলে ঢুকিয়ে সিলগালা করতে হবে এবং বোতলের মুখটি ভালো করে আটকিয়ে এতে লেবেল আটকাতের। হবে। অতপর বাজারজাতকরণ করতে হবে। বিশুদ্ধ মধু ক্রয়ের জন্য জনসাধারণকে অবগত করতে হবে। এর দাম কম রাখতে হবে যাতে বাজার সৃষ্টি করতে পারে। খুচরা ও পাইকারির মাধ্যমে এর বাজারজাতকরণ করতে পারে।

বোতলের লেবেলে তথ্য বিশ্লেষণ লিপিবদ্ধ করতে হবে। এছাড়া মধু উৎপাদনে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কার্যক্রমে সহযোগিতা করলে এ খাত উন্নত হবে এবং অনেক লোকের কর্মসংস্থান হবে। বেকার সমস্যা দূর হবে।

Leave a Comment