অণুজীব নির্বাচন বাছাইকরণ এবং উন্নয়ন পদ্ধতি 

অণুজীব বাছাইকরণ :অণুজীব বাছাইয়ে বিভিন্ন উৎস

যথা-হ্রদ, নদী বা পুকুরের পানি অথবা কর্দমাক্ত মাটি নির্বাচন করা হয়। ঐ নির্বাচিত সমৃদ্ধ মোডে অণুজীব সংগ্রহ করা হয়। প্রাকৃতিকভাবে হিউমাস সমৃদ্ধ মাটিতে ১০” গ্রাম হারে বিভিন্ন প্রজাতির অণুজীব বাস করে। অণুজীব উৎসে অণুজীব প্রজাতি দিশ্রিত অবস্থায় থাকে। তাই সেখান থেকে একটি প্রজাতি পৃথক কার এর বিশুদ্ধ কালচার তৈরি করে বৈশিষ্ট্য শনাক্ত করা যায়। এই কাজটি এমনভাবে করা হয় যাতে কাঙ্ক্ষিত প্রজাতি সংখায় বাড়ে কিন্তু বাকি সকল প্রজাতির সংখ্যা বৃদ্ধি রোধ হয় সাধারণত মিশ্র কালচার থেকে বিশুদ্ধ কালচার তৈরি করে বাছাইকরণ সম্পন্ন করা হয়।


বিশুদ্ধ কালচার তৈরিতে নিম্নোক্ত ধাপগুলো উল্লেখযোগ্য-


ধাপ-১: মিশ্র কালচার থেকে ভিন্ন ভিন্ন কলোনি তৈরি করা হয়। তিন পদ্ধতিতে কলোনি তৈরি করা যেতে পারে। পদ্ধতিগুলো হলো- স্ট্রেক প্লেট পদ্ধতি, স্প্রেড প্লেট পদ্ধতি এবং পোর প্লেট পদ্ধতি। স্ট্রেক প্লেট পদ্ধতির বর্ণনা নিম্নরূপ:


স্ট্রেক প্লেট পদ্ধতি: মিশ্র ফালচার থেকে ট্রান্সফার লুপের সাহায্যে এক লুপ পরিমাণ মিশ্র কালচার একটি নির্বীজ আবাদ মাধ্যম পূর্ণ পেট্রিডিস বা পেট্রিপ্লেটের উপর স্থাপন করে লুপটি আগুনে পুড়িয়ে ঠাণ্ডা করে তার সাহায্যে দ্রুত কালচার মাধ্যমের উপর কয়েকটি সোজা দাগ কাটতে হবে যাতে মিশ্র কালচার এই দাগে ছড়িয়ে গড়ে। এবার এই অণুজীব যুক্ত বা ইনোকুলেটেড পেট্রিডিসকে কয়েক দিন অণুজীব বৃদ্ধির জন্য অপেক্ষা করতে হবে।






ধাপ-২: প্রথম ধাপে আর সেটা ভিন্ন ভিন্ন ধরনের

কলোনি থেকে কলোনি নির্বাচন করতে হবে। আবার নির্বাচিত কলোনি থেকে ইনোকুলাম নিয়ে পৃথক পৃথকভাবে টিউবে অবাদের জন্য ইনকিউবেশনে রাখতে হবে। এভাবে এক একটি টিউবে বিশুদ্ধ কালচার তৈরি করা হয়। বিশুদ্ধ কালচারের কলোনি হাইব্রিডাইজেশন করে কাঙ্ক্ষিত অণুজীব শনাক্ত করে বাছাই করা যায়।


অণুজীব নির্বাচন: বাছাইকৃত অণুজীব নিয়ে গুণাগুণ পরীক্ষার নির্বাচন করতে হবে। অণুজীব গুণাগুণ পরীক্ষায় (নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন অণুজীবের নির্বাচন করতে হবে-


(i)- স্বাভাবিক তাপমাত্রা ও অল্পসময়ে সাধারণ আবাদ মাধ্যমে অধিকতর দ্রুত বৃদ্ধি ক্ষমতা সম্পন্ন অণুজীব।
(ii) গুণগত মানে উন্নত দ্রব্য উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন হতে হবে।
(ii) সহজে নিষ্কাশন যোগ্য ও আবাদযোগ্য অণুজীব হতে হবে।
(iv) নিম্ন আবাদ ব্যয় সম্পন্ন হতে হবে।
(V) ভবিষ্যৎ আবাদ ব্যয় কম হতে হবে।
(vi) সহজে সংরক্ষণযোগ্য হতে হবে।


বাছাইকৃত বহুসংখ্যক অণুজীবের মধ্য থেকে উল্লিখিত গুণাগুণযুক্ত অণুজীব উৎপাদ তৈরির জন্য নির্বাচন করতে হবে।


অণুজীবের জাত উন্নয়ন: প্রাকৃতিক পরিবেশে প্রাপ্ত অণুজীবের উৎপাদন ক্ষমতা সীমিত ও উৎপাদিত পদার্থের গুণাগুণ সাধারণ মানের। এই উৎপাদন ক্ষমতা' ও গুণাগুণ বহুলাংশে বৃদ্ধি করা যায়।


Penicillium chrysogenum দ্বারা পেনিসিলিন উৎপাদন ১৯৪০ সালের দিকে অনেক কম ছিল। বর্তমানে P. Chrysogenum জাত থেকে ১০০গুণ বেশি পেনিসিলিন উৎপাদন করা যায়। এটি সম্ভব হয়েছে উৎপাদনের, পর্যায়ক্রমিক মিউটেশন ও মিউট্যান্ট নির্বাচনের মাধ্যমে। বর্তমানে জাত উন্নয়নের জন্য 'প্রচলিত মিউটেশন ও মিউট্যান্ট নির্বাচন পদ্ধতি ছাড়াও বেশ কিছু পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়েছে। এদের মধ্যে অলিগো নিউক্লিওটাইড নিয়ন্ত্রিত মিউটাজেনেসিস পদ্ধতি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। অলিগো নিউক্লিওটাইড নিয়ন্ত্রিত মিউটাজেনেসিস পদ্ধতিটি.

নির্ভর বর্তমান সময়ে জিনোমে মিউটেশন ঘটিয়ে প্রাপ্ত মিউট্যান্ট


জাত থেকে বিভিন্ন মূল্যবান উপাদান উৎপাদন সম্ভব। DNA-এর বিশেষ অংশের সংযোজন বা বিয়োজনের মাধ্যমে মিউটেশন ঘটিয়ে প্রোটিনের অ্যামাইনো অ্যাসিডে পরিবর্তন করতে পারলে মিউটেশনটি গুরুত্ব বহন করে। এইরূপ পরিবর্তনের জন্য DNA-র জিনে শুধুমাত্র একটি নিউক্লিওটাইডের পরিবর্তন প্রয়োজন। আর এই পরিবর্তনের মাধ্যমে মিউটেশন ঘটানোকে অলিগো নিউক্লিওটাইড নিয়ন্ত্রিত মিউটাজেনেসিস বলে। অলিগো নিউক্লিওটাইড নিয়ন্ত্রিত মিউটাজেনেসিস প্রক্রিয়ার পরিবর্তনাধীন। নিউক্লিওটাইডের সাথে সংযুক্ত পার্শ্ববর্তী ১০-১৫টি নিউক্লিওটাইডসহ DNA অংশটি প্রথমে কৃত্রিমভাবে সংশ্লেষ করা হয়।


এই সংশ্লেষিত অলিগো নিউক্লিওটাইডের সাথে আদি জিন বিশিষ্ট এক সূত্রক DNA খণ্ডের ক্লোনের সাথে সংকরায়ন করানো হয়। সংকরায়নের সময় অলিগোমারের পরিপূরক নিউক্লিওটাইডের মধ্যে জোড় সৃষ্টি হয়। এক্ষেত্রে অলিগোমার অংশটি প্রিমিয়ার সূত্রক হিসেবে কাজ করে। সাধারণত M₁ একসূত্রক ক্ষুদ্রাকৃতির জিনোম বিশিষ্ট ভাইরাস জিনোমের সাথে অলিগোমার সংশ্লেষ করা হয়। সংকরায়ন ঘটানোর কারণে প্রিমিয়ার সূত্রের সাথে পরিপূরক জোড় সৃষ্টির মাধ্যমে দ্বিসূত্রক DNA তৈরি হয়। DNA পলিমারেজ এনজাইম এক্ষেত্রে জোড় সৃষ্টিতে সাহায্য করে।

উৎপন্ন দ্বিসূত্রক DNA-র একটি সূত্রক আদি ও অন্যটি কাঙ্ক্ষিত মিউটেশন বিশিষ্ট ও কৃত্রিম। এই দ্বিসূত্রক DNA E. coli কোয়ে স্থানান্তর করে উহার প্রতিলিপি তৈরি করা হয়। মিউট্যান্ট ছিল বিশিষ্ট ব্যাকটেরিয়ার কলোনি শনাক্ত করে পৃথকভাবে কালচার করা হয় ও দ্রব্য উৎপাদনে ব্যবহার করা হয়।

Leave a Comment